রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানাল, এই চার ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ২২.৬০ শতাংশ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
কোচবিহার, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া— শনিবার ভোটের সকালে প্রথম চার ঘণ্টায় পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর সওয়া এগারোটার পর রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানাল, এই চার ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ২২.৬০ শতাংশ।
সকাল থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে দেখা যায়নি নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহকে। সকাল ১০টা নাগাদ তিনি কমিশনে পৌঁছন। প্রথম তিন ঘণ্টা কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে ছিল কমিশন। সকাল থেকে কন্ট্রোল রুমে এক ডজন ল্যান্ড ফোন বেজে যাচ্ছিল নাগাড়ে। তৈরি হচ্ছিল অভিযোগের এভারেস্ট। দৃশ্যতই বিড়ম্বিত দেখিয়েছে কমিশনের বাকি কর্তাদের।
হিংসার যে ছবি শনিবার সকাল থেকে দেখা গিয়েছে, তা বাংলায় নজিরবিহীন বলা যাবে না৷ অনেকের মতে, রক্ত, লাশের ঐতিহ্য মেনেই গ্রামের সরকার গঠনের ভোট হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোট হবে আর আলপথ রক্তে লাল হবে না, তা অবার হয় নাকি? তবে এ বার আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোটের কথা বলা হয়েছিল। যদিও শুক্রবার রাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, পুরোপুরি ৮২২ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে আসছে না।
প্রথম চার ঘণ্টায় যে ভোট পড়েছে তা অনেক নয়, আবার কমও নয়। বহু জায়গায় ব্যালট পেপার ছিনতাই, আগুন লাগিয়ে দেওয়া, বুথ দখলের চেনা ঘটনা ঘটেছে। শনিবার যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে মুর্শিদাবাদেই জোড়া খুন হয়েছে। রেজিনগর এবং খড়গ্রামে দুই তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছেন। নদিয়ার চাপড়ায় প্রাণ গিয়েছে শাসকদলের কর্মীর। আর এক তৃণমূল কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন মালদহের মানিকচকে। কোচবিহারের দক্ষিণ বিধানসভার ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটেরহাট ৩৮ নম্বর বুথের মধ্যেই বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মাধব বিশ্বাস নামে এক বিজেপি এজেন্টের।
বিরোধীরা যেমন হিংসা নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে, তেমন তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্য, একের পর এক তাঁদের কর্মীর মৃত্যুতেই স্পষ্ট, কারা হিংসাশ্রয়ী নির্বাচন করছে। তবে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, কোথায় প্রশাসন, কোথায় নির্বাচন কমিশন, কোথায়ই বা গেল কেন্দ্রীয় বাহিনী? বহু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দেখা যায়নি। কোথাও আবার দেখা গিয়েছে বুথের ভিতরে লুট চলছে, বাইরে দাঁড়িয়ে খৈনি ডলছেন সিভিক ভলান্টিয়ার। ভোট শেষ হতে আরও ছ’ঘণ্টা বাকি। আরও কী কী অপেক্ষা করে আছে, তা অবশ্য সময়ই বলবে।