শুক্রবার দুপুরে হাওড়া ডুমুরজলা হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারে পুরুলিয়ার সৈনিক স্কুলের হেলিপ্যাডে নামেন তিনি। তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
শুক্রবার এক দিনের ঝটিকা সফরে সস্ত্রীক পুরুলিয়া আসেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। আর সেখানেই নির্বাচন সুষ্ঠ ভাবে করার কথা তুললেন তিনি। প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘আমি চাই মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিন। ২০২১ সাল পশ্চিমবঙ্গের কাছে বড় সুযোগ। সবার কাছে অনুরোধ, রাজ্যে নির্বাচন যেন নির্বিঘ্নে হয়।’’ পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘পাবলিক সার্ভেন্ট পাবলিকের কাজ করবে যদি রাজনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তা গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে তা বিপজ্জনক।’’
শুক্রবার দুপুরে হাওড়া ডুমুরজলা হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারে পুরুলিয়ার সৈনিক স্কুলের হেলিপ্যাডে নামেন তিনি। তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। সেখান থেকে তিনি সৈনিক স্কুল পরিদর্শন করেন এবং কংসাবতী গার্লস হস্টেল উদ্বোধন করেন। এই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র তথা বিহারের নালন্দার বাসিন্দা অমিত রাজ প্রতিবেশী শিশুদের আগুন থেকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ দিয়েছেন। স্কুলের প্রিন্সিপাল এর হাতে ১১ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন রাজ্যপাল।
এরপর তিনি সার্কিট হাউজে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। প্রায় ৩৮ মিনিটের এই সম্মেলনে রাজ্যে পুলিশের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে সরকারি কর্মচারীরা রাজনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন।’’ এই নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমের একটি উদাহরণ তুলে আনেন। বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এই মাধ্যম যদি নির্ভয়ে খবর পরিবেশন করতে না পারে, তাহলে গণতন্ত্রের খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি আসার সময় একজন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। আমি আমার ৪০ বছরের আইনি জীবনেও পুলিশের এমন অত্যাচার দেখিনি। আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জগদ্দল থানার আধিকারিক এক ব্যক্তিকে নোটিস দিয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। এ ভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের ঘটনা বরদাস্ত করা যাবে না। এই বিষয়টি আমি অতি গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে দেখতে বলেছি।’’
সেখান থেকে ফের তিনি পুলিশের ভূমিকার প্রসঙ্গে গিয়ে বলেন, ‘‘আমি পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করব আইন থেকে সরে যাবেন না, সংবিধান ভুলে যাবেন না। বেলাগাম ভাবে কাজ করবেন না। মনে রাখবেন আইনের উর্ধ্বে আপনিও নন।’’
শুক্রবার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোর নেতৃত্বে সার্কিট হাউজে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল। বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ওপর মিথ্যা মামলা চাপানোর অভিযোগে রাজ্যপালকে একটি স্মারকলিপি দেন তাঁরা। পাশাপাশি বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে একটি স্মারকলিপি দেন পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজের একটি প্রতিনিধি দল। রাজ্যপাল বলেন, ‘‘পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজের একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। আমি নজর রাখব। পাশাপাশি এখানকার সাংসদও একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাতে পুলিশের অত্যাচার নিয়ে সবিস্তারে জানিয়েছেন।’’
শুক্রবার এই সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল কথা বলেন তাঁকে সরানোর দাবি নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার বিষয় নিয়েও। কথা বলেন নয়া কৃষি আইন নিয়ে। দীর্ঘ সাংবাদিক বৈঠকের পর হেলিকপ্টারে ফেরেন তিনি।
আরও পড়ুন:‘বিশ্বভারতীর জমি দখল করার কে অধিকার দিয়েছে’, ফের দিলীপের নিশানায় অমর্ত্য
আরও পড়ুন:মাথায় রুপোর মুকুট, বিজেপি-কে পগারপার করার হুঙ্কার অনুব্রতর