গত দু’মাসে রাজ্যে অনেকগুলি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। —ফাইল চিত্র।
এক দিনে এক ডজন ধর্ষণ মামলার শুনানি হল কলকাতা হাই কোর্টে। সোমবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাগুলির শুনানি হয়। ফলে দিনভর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ব্যস্ত থাকল এই মামলাগুলি শুনতেই। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
গত দু’মাসে রাজ্যে অনেকগুলি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ধাপে ধাপে ময়নাগুড়ি, নেত্রা, পিংলা, নামখানা, শান্তিনিকেতন, মাটিয়া, দেগঙ্গা, ইংরেজবাজার, বাঁশদ্রোণী, হাঁসখালি, উত্তরপাড়া ও বাদুড়িয়া— এই ১২টি ধর্ষণের ঘটনায় হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। গত মাসে মাটিয়া, দেগঙ্গা, ইংরেজবাজার ও বাঁশদ্রোণী ধর্ষণ-কাণ্ডের মামলাগুলি প্রথম আসে আদালতে। তখন এই ঘটনাগুলির তদন্তে আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেনকে দায়িত্ব দেয় হাই কোর্ট। তার পর হাঁসখালি গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। পিংলার ঘটনায় আইপিএস অফিসার পারুল কুশ জৈনকে দায়িত্ব দেয় আদালত। এ ছাড়া ময়নাগুড়ি, নেত্রা, নামখানা, শান্তিনিকেতনের ঘটনায় রাজ্য পুলিশ তদন্ত করছে। সোমবার উত্তরপাড়া ও বাদুড়িয়া ধর্ষণ-কাণ্ডে নতুন মামলা হয় হাই কোর্টে।
সোমবার সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুনানি শুরু হয়। প্রথমে ওঠে ময়নাগুড়ি, নেত্রা, পিংলা, নামখানা ও শান্তিনিকেতন ধর্ষণের মামলা। প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে এই মামলাগুলির শুনানি। এর পর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ শোনে হাঁসখালি মামলা। আধ ঘণ্টা পর ওঠে মাটিয়া, দেগঙ্গা, ইংরেজবাজার ও বাঁশদ্রোণী ধর্ষণের মামলা। মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুনানি হয় উত্তরপাড়া ও বাদুড়িয়া ধর্ষণ মামলার। মাঝে অল্প সময় বগটুই হত্যাকাণ্ড এবং মালদহের কালিয়াচক বোমা বিস্ফোরণ মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। আরও দু’একটি মামলা উঠলেও সবিস্তার শুনানি হয়নি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বলা যায়, এতগুলি ধর্ষণ মামলা শুনতেই সারা দিন ব্যস্ত থাকল প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ।
এর আগে দেগঙ্গা-সহ চারটি ধর্ষণ মামলার শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘কী ব্যাপার বলুন তো! পর পর একই ধরনের এত ঘটনা সামনে আসছে!’’ সেই সময় রাজ্যের কৌঁসুলি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘দেশের রাজধানীতেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কেন্দ্রের রিপোর্ট বলছে, সারা দেশের মধ্যে কলকাতা নিরাপদ শহর।’’
তবে শুধু মামলা মোকদ্দমা নয়, বিষয়টিকে সামনে রেখে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত বলেন, ‘‘১০টি মামলায় তো আমিই রয়েছি। পর পর এতগুলি মামলার শুনানি এর আগে কোনও দিন দেখিনি। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, বাংলায় ২ শতাংশ অভিযুক্তের শাস্তি হয়। আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি হয়েছে!’’
আইনজীবী সঞ্জয় বর্ধন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। উত্তরপ্রদেশে সব থেকে বেশি ধর্ষণ হয়। আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলে নির্বাচিত সরকারের বদনাম করা হচ্ছে। আইন আইনের কাজ করছে। এই সরকার তো ঘটনাগুলিকে আড়াল করছে না।’’
অন্য এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘ঘটনাগুলি হয়েছে তা সত্যি। এক দিনে এত মামলার শুনানি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা। শুনানি অনুযায়ী তো মামলার তারিখ পড়ে। কাকতালীয় ভাবে আজকে এতগুলি মামলা উঠেছে।’’