কাঁথি শহরে তৃণমূলের দেওয়াল লিখনে শুভেন্দুর স্লোগান। নিজস্ব চিত্র
বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বাঙালির কাছে রামের পাশাপাশি কৃষ্ণকে এনেছিলেন। প্রতিটি সভায় সেটি শুভেন্দুর বাঁধা স্লোগান হয়ে গিয়েছিল। ‘জয় শ্রীরাম’ এবং ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলার পর জনতার দিকে তাকিয়ে শুভেন্দু হাত তুলে বলতেন, ‘হরেকৃষ্ণ হরে হরে..’। জনতা জবাব ফিরিয়ে দিয়েছিল ‘পদ্ম এবার ঘরে ঘরে’। এ বার সেই স্লোগানের প্রতিফলন রাজ্যের শাসক দলের ভোট প্রচারেও। তাও আবার শুভেন্দুর ‘খাসতালুক’ কাঁথিতে।
পুরভোটের প্রচারে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীদের দেওয়াল লিখনে প্রচার করা হচ্ছে, ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। লক্ষ্মী ভান্ডার ঘরে ঘরে’। ইতিমধ্যে রাজ্যের শাসক দলের ভোটপ্রচারে এই স্লোগান নজর কেড়েছে অনেকেরই। বিধানসভা ভোটে রাজ্যব্যাপী সবুজ ঝড়ের মধ্যেও দক্ষিণ ও উত্তর কাঁথির দুটি আসন হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। মূলত হিন্দু ভোটের একটা বড় অংশ গেরুয়া শিবিরের দিকে চলে যাওয়ায় এই দুই আসনে শাসক দলের পরাজয় ঘটেছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। তাই পুরনির্বাচনে হিন্দু সমর্থন ফিরে পাওয়ার জন্য শাসক দল সুকৌশলে শুভেন্দুর স্লোগানকে নিজেদের মতো করে তুলে ধরেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ভেবেচিন্তেই ওই স্লোগান বার করেছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। এক শুভেন্দু অনুগামীর কথায়, ‘‘রামের কথা বলার পাশাপাশি আমাদের কৃষ্ণ, হরি, বিষ্ণুকেও আনতে হবে। বাঙালি রামের চেয়ে কৃষ্ণকে বেশি চেনে। এই সত্যটা মেনে নিতে হবে। এই সত্যটা দলও বুঝেছিল। ফলে দলের নেতারাও শুভেন্দুদার স্লোগানকে বৈধতা দিয়েছেন।’’
হিন্দু ভোটারদের যে সমর্থন শুভেন্দুর সঙ্গে গিয়েছিল তা নিজেদের দিকেই ফেরাতেই এটা রাজ্যের শাসক দলের তরফে বিশেষ কৌশল বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। শহরের ২১ টি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীদের প্রচারে দেওয়াল লিখন করা হয়েছে ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে’ স্লোগান তুলে ধরে।
প্রসঙ্গত, এই স্লোগানের জন্মদাতা প্রয়াত অজিত পাঁজা। তৃণমূল গঠনের পর তিনিই প্রথম জনসমক্ষে বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘হরেকৃষ্ণ হরে হরে, তৃণমূল ঘরে ঘরে।’’ কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর তৃণমূলের প্রচার কর্মসূচি থেকে ধীরে ধীরে অবলুপ্তি ঘটে ওই স্লোগানের।
পুরভোটের আবহে শাসক দলের মুখের কৃষ্ণ নাম ওঠায় কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক তথা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অরূপ কুমার দাস বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভান্ডার ফেটে পড়ছে। তাই এখন হিন্দুত্বের মিথ্যে নাটক করার জন্য কৃষ্ণ নামে আশ্রয় নিয়ে স্লোগান লিখছে শাসক দল।’’ বিজেপি নেতা তথা শুভেন্দু অধিকারীরর ছোট ভাই সৌমেন্দু বলছেন, ‘‘সবকিছুই ওদের নকল করতে হয়। আসলে ওরা বুঝে গিয়েছে হিন্দুদের প্রতি কী আচরণ করা হয়েছে। তার প্রতিদানে যাতে তৃণমূলকে মারাত্মক ফল ভুগতে না হয় তার জন্যই শুভেন্দুবাবুর স্লোগানকে টুকলি করা হয়েছে।’’
যদিও বিজেপির কথা মানতে নারাজ শাসক দল। জেলা তৃণমূল সভাপতি তরুণ মাইতির দাবি, ‘‘আমরা স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি। চৈতন্য মহাপ্রভু যে হিন্দু ধর্মের কথা বলে গিয়েছেন সেই হিন্দু ধর্মের প্রচার আমরা করেছি। আসলে ওরা হিন্দুত্ববাদীর আড়ালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার বীজ বপন করার জন্য কৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করেছিল।’’