Hilsa

ইলিশ, ম্যানগ্রোভের স্বার্থে নাব্যতায় জোর গবেষণায়

বাঙালির পাতে ইলিশের জোগান বাড়াতে হলে কয়েকটি নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে মিষ্টি জলের প্রবাহ ফিরিয়ে আনা দরকার।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫১
Share:

নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে যাদবপুরের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক তুহিন ভদ্রের গবেষণায়। ফাইল চিত্র।

কলকাতা বা হলদিয়ার মতো বন্দরে বড় জাহাজের মসৃণ গতিবিধির জন্য ন্যূনতম নাব্যতা কত জরুরি, বছরের বিভিন্ন সময়ে সেটা অনুভূত হয়। শুধু জাহাজের অবাধ চলাচল নয়, আরও দু’টি বিশেষ লক্ষ্যপূরণে নদীর নাব্যতা বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন বলে জানাচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা। সেগুলি হল ইলিশ আর ম্যানগ্রোভ রক্ষা। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে চাই মিষ্টি ও পরিষ্কার জল। বাঙালির পাতে ইলিশের জোগান বাড়াতে হলে কয়েকটি নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে মিষ্টি জলের প্রবাহ ফিরিয়ে আনা দরকার। সেটা করতে পারলে সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গের অংশে বিভিন্ন নদীতে ইলিশ বাড়তে পারে। নিছক রসনাতৃপ্তি নয়, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক প্রহরী ম্যানগ্রোভ অরণ্য রক্ষার বৃহত্তর প্রয়োজনটিও।

Advertisement

নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে যাদবপুরের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক তুহিন ভদ্রের গবেষণায়। সুন্দরবন বদ্বীপের দিকে ধাবমান ইছামতী, যমুনা, সুতি-নোয়াই, আদিগঙ্গা, বিদ্যাধরী, মাতলা প্রভৃতি নদী মজতে মজতে এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, স্বাদু জল নদীর উপরিভাগে প্রায় আসতেই পারছে না। উল্টে নীচের দিকের সামুদ্রিক লবণাক্ত জলে ভরে যাচ্ছে বিভিন্ন নদী। রাজ্যের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন জানান, এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হলে অবিলম্বে নদীগুলির সংস্কার চাই। উপর থেকে স্বাদু জল যাতে বাধাহীন ভাবে বয়ে আসতে পারে, তার জন্য পলি সরিয়ে নদীখাত গভীর করা দরকার।

তুহিনের গবেষণা বলছে, কালবিলম্ব না-করে ইছামতীর মাজদিয়া থেকে কালাঞ্চি পর্যন্ত দীর্ঘ পথ গভীর করা দরকার। এর সঙ্গে পড়শি দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে ওই নদীর দেখভাল করা প্রয়োজন। ত্রিবেণীর কাছে যমুনা নদীতে পলি জমে জমে সেটিও হুগলি নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ওই দুই নদীকে ফের যুক্ত না-করলেই নয়। ত্রিবেণী থেকে টিপ্পি পর্যন্ত গতিপথ গভীর করা প্রয়োজন। তা হলে সুন্দরবন বদ্বীপের মাঝবরাবর স্বাদু জলের গতিপথ তৈরি হতে পারে। এর সঙ্গেই বাঁচাতে হবে সুতি, নোয়াই নদীকে। ইছাপুর-গুমা বামুনিয়ার কাছে বিদ্যাধরীরও নাব্যতা বাড়ানো দরকার।

Advertisement

তুহিনের এই গবেষণার গাইড বা নির্দেশক, যাদবপুরের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরার কথায়, ‘‘ইলিশের প্রজনন সারা বছর হলেও মূল প্রজনন হয় দু’বার। বর্ষাকালে আর বর্ষার পরে পরেই। এই দুই সময়ে নদীতে স্বাদু জল দরকার। বাংলাদেশের দিকে ব্রহ্মপুত্রের মিষ্টি জল পাওয়া গেলেও আমাদের দিকের নদী মজে যাওয়ায় তা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এ-পারে ইলিশ উৎপাদন দিনে দিনে কমেই চলেছে।’’

সুগত জানান, নাব্যতা বাড়াতে পারলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের সব চেয়ে বড়, অনন্য ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রও অক্সিজেন পাবে। কারণ ম্যানগ্রোভের জীবনচক্রে লবণাক্ত জলের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় স্বাদু জল ও পলির। তুহিন বলেন, ‘‘সুন্দরীর মতো কোনও কোনও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদের বেড়ে উঠতে এবং বেঁচে থাকতে স্বাদু জলের বেশি প্রয়োজন হয়। আবার বাইন-সহ বেশ কিছু প্রজাতির উদ্ভিদের ক্ষেত্রে দরকার বেশি লবণাক্ত জলের। স্বাদু জল না-পাওয়ায় সুন্দরী গাছ এই অঞ্চল থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।’’

সুগত বলেন, “আদিগঙ্গাকেও বাঁচানোর কথা শোনা যাচ্ছিল কিছু দিন আগে। কিন্তু কাজ এগোয়নি।’’ তাঁর পরামর্শ, গড়িয়ার কাছে খানিকটা খুঁড়ে আবার এই নদীকে সূর্যপুর থেকে পিয়ালির দিকে নিয়ে গিয়ে যোগ করা যায়। হেস্টিংস থেকে আদিগঙ্গার কালীঘাট, টালিগঞ্জের গতিপথটিকে অধিবাসীদের সাহায্য নিয়েই দূষণমুক্ত করা যাবে। এর সঙ্গে নদীগুলির মোহনাকেও গভীর করা দরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement