ফাইল চিত্র।
এত দিন ‘ট্র্যাফিক অ্যাক্টস’ বা যান আইন ভাঙলে কাগুজে চালানেই জরিমানা করত রাজ্য পুলিশ। এ বার তা বন্ধ করে যান আইন ভঙ্গকারীদের জরিমানা আদায়ে ই-চালান চালু করা হচ্ছে। অর্থাৎ গাড়ির মালিক বা চালকের মোবাইলে এসএমএস করে চালান পাঠানো হবে। ই-চালানে কাগজের চালানের মতো সব তথ্য থাকবে এবং তার পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করার লিঙ্কও থাকবে বলে জানান রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা।
ওই পুলিশকর্তা জানান, ই-চালানে শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, ভিন্ রাজ্যের কোনও গাড়ি কোথাও যান আইন ভাঙলে সেটাও জানতে পারবেন রাস্তায় কর্মরত পুলিশকর্মীরা। যান আইন ভাঙার ক্ষেত্রে ভিন্ রাজ্যের জরিমানা ওই চালানের মাধ্যমে দিতে পারবেন অন্য রাজ্যের গাড়িচালকেরা। আবার পশ্চিমবঙ্গের জরিমানার টাকাও ভিন্ রাজ্যে জমা দেওয়া যাবে।
রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, মহড়া হিসেবে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় ই-চালানের ব্যবহার শুরু করেছে ট্র্যাফিক পুলিশ। পুজোর পরে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে সারা রাজ্যেই। এর জন্য ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নিজেদের মোবাইলে ওই ই-চালান অ্যাপ ডাউনলোড করে তা ব্যবহার করবেন। জরিমানার টাকা জমা দেওয়ার জন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি করেছে রাজ্য পুলিশ।
পুলিশি সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই ই-চালান ব্যবস্থা চালু হচ্ছে সারা দেশেই। বিভিন্ন রাজ্যে এই নতুন ব্যবস্থা চালু হয়ে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সারা দেশের জন্য একটিই সার্ভার ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে সব রাজ্যের গাড়ি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রয়েছে। দেশের যে-কোনও প্রান্তে বসে পুলিশ অফিসারেরা ওই সার্ভার থেকে যে-কোনও গাড়ির সবিস্তার তথ্যে পেয়ে যাবেন। এই ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে ডিজিটাল লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ থাকবে পুলিশের কাছে। বর্তমানে ডিজিটাল লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা যায় না।
রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা জানান, যান আইন অমান্যকারী ভিন্ রাজ্যের গাড়িকে ‘সাইটেশন কেস’ (লঘু মামলা) দেওয়া হলে জরিমানার টাকা এখানে জমা না-দিয়েই সেই গাড়ি অন্য রাজ্যে চলে যেত। এতে ক্ষতি হত রাজস্বের। আবার অন্য কোনও রাজ্যের গাড়ি সেখানে যান আইন লঙ্ঘন বা দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত হলে বাংলার পুলিশ তা জানতে পারত না। ন্যাশনাল ইনফর্মেটিক্স সেন্টারের (এনআইসি) ই-চালান চালু হলে পুলিশ অফিসারেরা এই সংক্রান্ত সব তথ্য এক ক্লিকেই জেনে যাবেন। ফলে সংশ্লিষ্ট গাড়িচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে। আবার পশ্চিমবঙ্গে যান আইন ভাঙার ক্ষেত্রে জরিমানার টাকা ভিন্ রাজ্যে আদায় হলেও তা বাংলার কোষাগারে জমা পড়বে। রাজ্যের ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, ই-চালানের বন্দোবস্ত হলে পুলিশকর্মীদের ভুল করে গাড়িতে কেস দেওয়ার অভিযোগ কমবে। এই ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে কোথায় কোন গাড়ি যান আইন ভেঙেছে, ই-চালানে জিপিএসের মাধ্যমেই তা জেনে নেওয়া যাবে।