প্রতীকী ছবি।
অতিমারির মধ্যে অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়ারা কতটা শিখতে পেরেছে, তা দেখতে আইসিএসই এবং সিবিএসই স্কুলগুলি হাফইয়ার্লি বা ষাণ্মাসিক পরীক্ষা শুরু করেছে। কিছু স্কুল ওই পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার মতোই নীচের ক্লাসের ষাণ্মাসিক পরীক্ষায় কোনও র্যাঙ্কিং থাকছে না।
দুই বোর্ডেরই বিভিন্ন স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, অনলাইনে কে কতটা শিখতে পারল, তার মূল্যায়ন জরুরি। তবে অনলাইন পরীক্ষায় নানা ধরনের অসুবিধা আছে। যে-সব পড়ুয়ার বাড়ি কলকাতায় নয়, হস্টেলে বা আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে যারা পড়াশোনা করে, তারা লকডাউনে নিজের বাড়ি চলে গিয়েছে। অনেকের বাড়ি হয়তো জেলার প্রত্যন্ত কোনও গ্রামে। সেখানে নেট সংযোগ ভাল নয়। তাই তারা কী ভাবে পরীক্ষা দেবে, সেই প্রশ্নও উঠছে।
মডার্ন হাইস্কুলের ডিরেক্টর দেবী কর জানান, তাঁরা চলতি মাসেই ষাণ্মাসিক পরীক্ষা নেবেন অনলাইনে। “বাড়ি থেকে পরীক্ষা। তবে পড়ুয়ারা দেখে লিখলে বা মা-বাবার কাছ থেকে জেনে নিয়ে লিখলে আখেরে ক্ষতি হবে তাদেরই। এটা পড়ুয়াদের মাথায় রাখতে হবে। তা ছাড়া মুখস্থবিদ্যার উপরে নয়, কে কতটা বুঝতে পেরেছে, তার উপরেই জোর দিই আমরা। অনলাইনে পরীক্ষার প্রশ্ন এমন ভাবে করতে হবে যে, পরীক্ষার্থী মুখস্থ করে বা বই দেখে তার উত্তর লিখতে পারবে না,” বললেন দেবী কর।
সাউথ পয়েন্টের ষাণ্মাসিক পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। অধ্যক্ষা রূপা সান্যাল ভট্টাচার্য জানান, তাঁদের কিছু পড়ুয়ার বাড়ি জঙ্গলমহলে। কলকাতায় হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। তারা লকডাউনে বাড়ি চলে গিয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, পরীক্ষার সময় এমন জায়গায় থাকতে হবে, যেখানে নেট সংযোগ ভাল। ‘‘বাড়িতে বসে পরীক্ষা বলেই কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শুধু লিখিত পরীক্ষা নয়, কুইজ, মৌখিক পরীক্ষা, প্রজেক্ট ওয়ার্ক— সব মিলিয়ে মূল্যায়ন করা হবে পড়ুয়াদের। এ বার আমাদের র্যাঙ্কিংয়ের কোনও ব্যবস্থা থাকছে না,” বললেন রূপাদেবী।
র্যাঙ্কিং রাখছে না শ্রীশিক্ষায়তন এবং ডিপিএস নর্থ কলকাতাও। কিন্তু বাড়িতে বসে লিখিত পরীক্ষা দেওয়া কি সব ক্ষেত্রে স্কুলে দেওয়া পরীক্ষার মতো বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে? শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, “যদি কোনও পড়ুয়ার উত্তরপত্র দেখে সন্দেহ হয় যে, সে অভিভাবককে জিজ্ঞেস করে বা বই দেখে লিখেছে, তখন তাকে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নটাই করা হচ্ছে মুখে মুখে। একই প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো দিতে না-পারলে বোঝা যাবে, সে সাহায্য নিয়ে লিখেছে।” ডিপিএস নর্থ কলকাতায় এখনও শুরু হয়নি পরীক্ষা। অধ্যক্ষা সুজাতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা লিখিত পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের ভিডিয়ো ও অডিয়ো চালু রাখতে বলব। কী ভাবে উত্তরপত্র স্ক্যান করে পাঠাতে হবে, তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে অভিভাবকদেরও। অনলাইনে পরীক্ষা চলাকালীন ছেলেমেয়ের উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে।”
ক্লাসের ষাণ্মাসিক পরীক্ষার মতো অনলাইনে ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলের অধ্যক্ষা মৌসুমী সাহা। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা অনলাইনে কতটা শিখল, সেটা দেখাই উদ্দেশ্য। শুধু লিখিত পরীক্ষায় পুরোটা বোঝা সম্ভব নয়। তাই ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। বাকি ৬০ নম্বর থাকবে মৌখিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন বিষয়ের দক্ষতার উপরে।”