(বাঁ দিকে) ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় এবং (ডান দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
চিঠি-চাপাটি থেকে রাজনৈতিক চাপানউতর চলছেই। ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের বিধায়ক পদে শপথগ্রহণ নিয়ে শনিবার থেকে টানাপড়েন জারি রয়েছে। তৃণমূল যখন এ নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ভূমিকাকে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করছে, তখন নির্মল আপাতত তা থেকে একটু দূরেই থাকতে চাইছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি জানিয়েছেন, এখন কিছু নয়। রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে যা বলার পরে বলবেন। শপথগ্রহণ পর্বটা দুগ্গা-দুগ্গা করে মিটে যাওয়ার পর।
মঙ্গলবার বেশি রাতে নির্মল বলেন, ‘‘আমার শপথগ্রহণ নিয়ে যা চলছে, তা নিয়ে যা বলার মুখ্যমন্ত্রী তথা আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলবেন।’’ রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে তাঁর কী প্রতিক্রিয়া? নির্মলের জবাব, ‘‘মহামান্য রাজ্যপালকে নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’
তবে সেখানে শেষ নয়। পরের প্রশ্নে কিছুটা আগল রেখে ধূপগুড়ির বিধায়ক জবাব দিলেন। অধ্যাপক হিসাবে কি তিনি মনে করেন রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে সংসদীয় গণতন্ত্রকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করছেন? নির্মল বলেন, ‘‘এ নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি। সময়ে যা মন্তব্য করার করব।’’
‘সময়’ মানে কী, তা অবশ্য নির্মল খোলসা করেননি। তবে অনেকেই বলছেন, নির্মল শপথগ্রহণের মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছেন।এখনও রাজ্যপালকে ‘মাননীয়’বলে সম্বোধন করছেন। পাশাপাশিই আক্ষেপ করছেন, ‘‘ধূপগুড়ির মানুষ তো তাঁদের কাজ করার জন্য আমায় জিতিয়েছেন। শপথ না হওয়ার ফলে সেই কাজে দেরি হয়ে যাচ্ছে।’’
গত ৮ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনে জয়ের পর থেকেই ঝুলে রয়েছে নির্মলের শপথগ্রহণ। চলছে চিঠি-চাপাটি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে। তাতে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে আহ্বান জানিয়েছেন বিধানসভায় গিয়ে নির্মলকে শপথবাক্য পাঠ করাতে। প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাজভবনেই নির্মলের শপথগ্রহণ করাতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু শনিবার পরিষদীয় দফতর তাতে সাড়া না দেওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। মঙ্গলবার বিধানসভায় শপথগ্রহণের সবুজ সঙ্কেত দিয়ে চিঠি পাঠায় রাজভবন। সেখানে বলা হয়, ডেপুটি স্পিকার শপথগ্রহণ করাবেন। যদিও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছেন, স্পিকারের বদলে তাঁকে দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করানোটা পরিষদীয় শিষ্টতা এবং রীতির পরিপন্থী। এর পরেই স্পিকার রাজভবনে পাল্টা চিঠি পাঠান। তাতে বলা হয়, রাজ্যপালই নির্মলকেশপথবাক্য পাঠ করান। কিন্তু সেটা রাজভবনে নয়, বিধানসভায় গিয়ে।
এ সবের মধ্যেই আটকে রয়েছে বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ধূপগুড়ি বিধানসভা আসনের জয়ী প্রার্থীর শপথগ্রহণ। তৃণমূল যখন ঠারেঠোরে রাজ্যপালকে ‘নাটের গুরু’ বলা শুরু করে দিয়েছে, তখনও নির্মল কিছুটা ধীরস্থির হয়ে বলতে চাইছেন, রাজ্যপালকে নিয়ে এখনই কিছু বলার নেই। সময় এলেই বলবেন। আপাতত ভালয়-ভালয় শপথগ্রহণটা হোক!