কিছু দিন আগে হঠাৎ জানতে পারলাম ভোটার তালিকায় আমার নাম নেই (এপিক নম্বর: এফকেওয়াই৩৫৩১৯২৮)। গত ৩৩ বছর ধরে যে বুথে সমস্ত নির্বাচনে ভোট দিয়েছি, সেখানে আমার নাম মুছে ফেলা হয়েছে। মুছে ফেলার খবর জানিয়ে আমার কাছে কোনও নোটিস, এসএমএস, ইমেল কিচ্ছু আসেনি, কোনও শুনানি হয়নি, আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ দেওয়া হয়নি।
দিল্লিতে, মহারাষ্ট্রে ঠিক একই কায়দায় লক্ষ লক্ষ বৈধ ভোটারের নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। ঢোকানোও হয়েছিল লক্ষ লক্ষ অবৈধ ভোটারের নাম। দু’ক্ষেত্রেই ফল পেয়েছে বিজেপি। লোকসভা ভোটে ওই দুই জায়গায় যে ফল হয়েছিল, ভোটারের নাম কাটা আর ঢোকানোর খেলায় বিধানসভায় তা পুরো উল্টে গিয়েছে। এ বার পশ্চিমবঙ্গের পালা। পশ্চিমবঙ্গ দখল করে বেয়াড়া বাঙালিকে শায়েস্তা করার, হিন্দুত্বের মূলধারায় নিয়ে আসার বহু দিনের শখ গেরুয়া দলগুলির। যুবক বয়সে আমার এক বামমনস্ক বন্ধুকে রিগিং নিয়ে প্রশ্ন করাতে সে জবাব দিয়েছিল, “জনতা তো আসলে বুদ্ধু, তাদের উপর সবটা ছেড়ে দিলে তো ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতা দখল করে নেবে। অতএব, মানুষের ভালর জন্যই রিগিং।” গেরুয়ামহলও বোধ হয় একই রকম ভাবছে। বাঙালিদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর সবটা ছেড়ে দিলে হিন্দুরাষ্ট্র সুদূরকল্পনা হতে পারে। বাঙালি তো অজ্ঞ, জানে না হিন্দুরাষ্ট্র হলে কতখানি উন্নতি হবে! ফলে এই ব্যবস্থা অর্থাৎ সম্ভাব্য বিরোধী ভোটার মুছে ফেলে, সম্ভাব্য বিজেপি ভোটার ঢোকানো চলছে কি?
অনলাইনে নতুন ভোটার কার্ডের জন্য আবেদন করতে গিয়ে দেখলাম, কেবল দু’টি ‘অপশন’ দেখাচ্ছে: প্রথম বার নতুন ভোটার হিসাবে আবেদন আর বিদ্যমান ভোটার হিসাবে আবেদন। বিদ্যমান ভোটারে যেই ক্লিক করে আবেদন করতে গেলাম, এপিক নম্বর এন্ট্রি করতে বলছে। এপিক নম্বর যেই এন্ট্রি করছি, কোনও তথ্য নেই বলে দেখাচ্ছে এবং আবেদন আর এগোতেই দিচ্ছে না (কারণ নাম তো ‘ডিলিট’ হয়ে গিয়েছে)। বাধ্য হয়েই ৫১ বছর বয়সে প্রথম বার নতুন ভোটার কার্ড চেয়ে আবেদন করতে হল! আশঙ্কা, ভবিষ্যতে না বলা হয়— আপনি তো ২০২৫-এ বাংলাদেশ থেকে এসে এখানে নতুন ভোটার কার্ড বানিয়েছেন। ফলে আপনি নাগরিকই নন। বাঙালি নাম-পদবি হলে তো কেন্দ্রীয় সরকারের চোখে— “আপনি নির্ঘাত প্রতিবেশী দেশটি থেকে এসেছেন!” তার বিপদ অন্য ভারতবাসীর চেয়ে অনেকটাই বেশি। আশঙ্কা তাই থেকেই যাচ্ছে।
ইন্দ্রনীল মণ্ডল, কলকাতা-১৬
ভুল ধরবে কে
‘সময় বেঁধে ভোটার তালিকায় সংশোধন চায় তৃণমূল’ (৪-৩) শিরোনামের প্রতিবেদনটি পড়লাম। ভোটার কার্ডের একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটারের বিষয়টি অনভিপ্রেত হলেও, নতুন কিছু নয়। এমনকি একই এপিক নম্বর একই ব্যক্তি, কিন্তু দুই জায়গায় ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে— দেখা যায়। কী ভাবে হয় জানা নেই। নির্বাচন কমিশনের সফটওয়্যারে বিভিন্ন ছাঁকনিতে সেগুলো ধরা পড়ে, আবার পড়েও না। অনেক ক্ষেত্রে সংশোধন হয়, আবার হয়ও না। আবারও নতুন ভুল হয়। নির্বাচন কমিশনের সফটওয়্যার নিখুঁত ও শক্তিশালী করা এবং ঠিক ভাবে ব্যবহার করা উচিত।
অফলাইন ও অনলাইনে আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া নথির ‘মূল’ কপিটি যাচাই করাও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় জ়েরক্সের দোকানে নথিকে কাটাছেঁড়া করে প্রিন্ট বা জ়েরক্স করে আবেদনের সঙ্গে জুড়ে দিয়েও ভোটার তালিকায় গরমিল করা হয়। নতুন আবেদনকারীর ক্ষেত্রে জন্মতারিখ বা বয়সের প্রমাণপত্র, নাগরিক প্রমাণপত্র, বসবাসের প্রমাণপত্র যাচাই করা উচিত। স্থান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অনলাইনে শুধুই ঠিকানার উল্লেখ না করে তার সঙ্গে যে বুথে স্থানান্তরিত হচ্ছেন সেই বুথ নম্বরের ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এপিক নম্বর উল্লেখের জায়গা থাকা উচিত। না হলে অনলাইনে স্থানান্তরের আবেদনের ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। যেমন, মুর্শিদাবাদের নওদা বিধানসভার ত্রিমোহিনী গ্রামের বুথের একটি এপিকের পিছনে ঝাউবোনা গ্রামের একটি বুথের ঠিকানা ছাপা হয়েছে। সফটওয়্যার শক্তিশালী হলে এ রকম ভুল হওয়ারই কথা নয়। হয় আবেদন বাতিল হয়ে যাবে, নয়তো আপডেট করা তথ্য ঠিকঠাক দেখাবে।
তৃণমূল নেতৃত্ব জেলায় জেলায় বুথে বুথে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কর্মসূচি চালাচ্ছেন। মুর্শিদাবাদের নওদা, হরিহরপাড়া, ডোমকল সর্বত্রই বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলছে ভোটার তালিকা যাচাই। সেখান থেকে উঠে আসছে, মৃতদের নামও ভোটার তালিকায় রয়ে গিয়েছে। সর্বশেষ ভোটার তালিকা প্রকাশের তারিখ ছিল ৬ জানুয়ারি ২০২৫। এ দিকে ১২ নভেম্বর ২০২৪ থেকে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত চলেছিল বুথে বুথে আবেদন জমা নেওয়ার কাজ। অর্থাৎ, বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংশোধন ২০২৫-এর কাজ চলেছিল এক মাস যাবৎ। সেই সময় যে সমস্ত আবেদন (অর্থাৎ সংযোজনের জন্য ফর্ম, বিয়োজনের জন্য ফর্ম, সংশোধন ও স্থানান্তরের জন্য আলাদা ফর্ম) জমা হয়েছে সেগুলো সর্বশেষ ভোটার তালিকায় স্থান পায়নি বা দেওয়া হয়নি। অন্তত নওদা তথা মুর্শিদাবাদে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। ফলে আবেদনের পরেও মৃতের নাম রয়ে গিয়েছে ভোটার তালিকায়। আর মৃতের নাম বাদ না যাওয়ায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাজার গরম হচ্ছে।
কিন্তু, বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংশোধন চলাকালীন বুথ স্তরের নেতা বা কর্মীরা মৃতের নাম বাদ দেওয়া নিয়ে কি সদর্থক ভূমিকা নেন? মৃতের বাড়িতে গিয়ে মৃত্যুর প্রমাণপত্র নিয়ে ফর্ম-৭ কি জমা করেন? না কি পরিবারের সদস্যদের দিয়ে জমা করান? তা জানা নেই, তবে অনেক বুথে পাঁচ বছর আগের মৃত লোকের নাম এখনও আছে, কিন্তু বছর দুই আগের মৃতের নাম বাদ গিয়েছে।
হামিম হোসেন মণ্ডল (বুলবুল), ঝাউবনা, মুর্শিদাবাদ
প্রস্তাব রইল
আলাদা রাজ্যের দু’জন আলাদা ব্যক্তির একই নম্বরের ভোটার কার্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা মানুষের মন থেকে সন্দেহ দূর করতে পারেনি। প্রত্যেক ভোটারের ভোটার কার্ডের নম্বর অদ্বিতীয় হবে— এর বাইরে বিষয়টি নিয়ে আর কোনও ব্যাখ্যা চলে না।
আর এক জন টি এন শেষনের অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই কিছু ব্যবস্থা করা যায়। ভোটার কার্ডের নম্বর তৈরি করতে প্রথমে রাজ্যের আদ্যক্ষর থাকবে (যেমন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ডব্লিউবি), এর পর থাকুক বিধানসভা কেন্দ্রের ক্রমিক সংখ্যা (উদাহরণ:২৫০), তার পর বুথের ক্রমিক সংখ্যা (এটা এখনও দেওয়া হয় না), এর পর অংশের ক্রমিক সংখ্যা (১০০), শেষে ভোটারের অন্তর্ভুক্তি অনুযায়ী ক্রমানুসারে সংখ্যা (উদাহরণ ২৩০)। এ ভাবে ভোটার কার্ডের নম্বর হবে ডব্লিউবি২৫০১০০২৩০। অর্থাৎ বারোটা অক্ষর, সংখ্যা সমন্বয়ে গঠিত এক অদ্বিতীয় পরিচয়। এই পদ্ধতি বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কেউ ভাবলে, বাধিত হব।
অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
আজব মুশকিল
মোবাইলে একটা মেসেজ পেলাম যে এপিক নম্বর বদলের জন্য আমার আবেদনপত্র নাকি নির্বাচন কমিশন পেয়েছে। আমি অবাক, কারণ আমি তো এ ধরনের কোনও আবেদনই করিনি। স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করে মেসেজ এবং আমার ভোটার কার্ড (এই কার্ডেই গত নির্বাচনগুলোতে ভোট দিয়ে এসেছি) দেখাতে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক কম্পিউটারে সব খতিয়ে দেখে জানালেন যে, সত্যিই আমার আবেদনপত্র জমা পড়েছে এপিক বদলের জন্য। আবেদন করল কে? এর সদুত্তর তাঁর কাছে ছিল না।
আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এবং আমার কিছু করণীয় আছে কি না জানতে চাই।
দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য, কলকাতা-৫৭