ধর্না মঞ্চে সন্তান কোলে মা। মঙ্গলবার মেয়ো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
দুপুর ২টোর চড়া রোদে ছাতা মেলে বসে আছেন মা। কোলে বছরখানেকের বাচ্চা। বাচ্চাকে বোতলের দুধ খাওয়াচ্ছেন তিনি। পাশেই বসে রয়েছেন বাচ্চাটির বাবা।
ধর্মতলায় স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের অনশন-মঞ্চে অনশন করছেন শিশুটির বাবা। যদিও তিনি চাকরিপ্রার্থী নন, এসএসসি-র পরীক্ষা পাশ করে চাকরি চাইছেন শিশুটির মা। তা হলে তাঁর স্বামী অনশন করছেন কেন? জবাবে শিশুটির বাবা অর্প বৈদ্য বললেন, ‘‘বাচ্চাটা এত ছোট! মাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। মা-ই বা কী করে বাচ্চা নিয়ে এত দিন অনশন করবে? অগত্যা স্ত্রীর হয়ে আমিই করছি অনশন।’’
অর্পবাবুর বাড়ি যাদবপুরে। তাঁর স্ত্রী মৌমিতাদেবী মঙ্গলবার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে বাচ্চা নিয়েই এসেছিলেন অনশন-মঞ্চে। তিনি বলেন, ‘‘ওয়েটিং লিস্টে আমার নাম ঝুলছে এক বছর ধরে। আমার স্বামী ফোটোগ্রাফির কাজ করেন। পরিবারের জন্য আমার চাকরিটা খুব দরকার।’’ অনশনকারী সোমা প্রামাণিকও মঞ্চে রয়েছেন তাঁর দু’বছরের বাচ্চাকে নিয়ে। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর শাশুড়ি।
এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের অনশন ১৩ দিনে পড়ল। লোকসভার ভোট ঘোষণার পরে নির্বাচনী বিধি মেনে সরকার নতুন কারও কাউন্সেলিং বা নিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। এসএসসি-র চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার বলেন, ‘‘এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখার অনুমতি চেয়ে আমি নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখেছি।’’
কমিশনের খবর, তৃতীয় দফার কাউন্সেলিংয়ের তারিখ আগেই ধার্য হয়েছে। ১৯-২০ মার্চ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকদের এবং ২৬-২৯ মার্চ আর ১ এপ্রিল নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকদের কাউন্সেলিং হওয়ার কথা। তবে তার পরেও অনেকের ডাক পাওয়া বাকি থাকবে। এসএসসি-র আবেদন খতিয়ে দেখছে কমিশন। রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সঞ্জয় বসু বলেন, ‘‘আগে থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু থাকলে তো সমস্যা নেই। কিন্তু নতুন করে কাউন্সেলিংয়ের তারিখ বা পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা যাবে না।’’
গরম ক্রমশ বাড়ছে। তাতে কষ্ট বাড়ছে অনশনকারীদের। রোদের মধ্যে বসানো শিশুদের অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। সোমবার রটে যায়, এক অনশনকারী মহিলার পেটের সন্তান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, অনশন-মঞ্চে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা অন্তঃসত্ত্বা বা শিশু-কোলে মায়েদের অনশনে শামিল হওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন কেন? অর্পিতা দাস নামে এক অনশনকারী বলেন, ‘‘আমরা জানতামই না যে, ওই মহিলা গর্ভবতী। তাঁর গর্ভের সন্তান নষ্টা হওয়ার কথাটা ঠিক নয়। তবে তাঁর অবস্থা কিছুটা আশঙ্কাজনক। আরও দু’জন অন্তঃসত্ত্বা অনশন করছেন জেনে তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। শিশুদের মায়েদেরও বলছি, এমন কিছু করবেন না, যাতে বাচ্চার শরীর খারাপ হতে পারে।’’
তানিয়া শেঠ নামে এক অনশনকারী জানান, তাঁরা আরটিআই বা তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করে জানতে পেরেছেন, বেশির ভাগ জেলার স্কুলে প্রচুর শিক্ষকপদ শূন্য। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সব সফল প্রার্থীরই চাকরি হয়ে যায়। তবু এসএসসি-র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চাকরি চেয়ে রাস্তায় বসে অনশন করতে হচ্ছে!