দুধ বিলি চলছে পুরুলিয়ার হুড়া থানায়। ছবি: সুজিত মাহাতো।
কারও দোকানে ট্যালট্যালের বদলে বিকোচ্ছে মালাই চা। কারও বাড়িতে অসময়ে পাতে পড়ছে পায়েস। কেউ বা তৈরি করছেন খোয়া-ক্ষীর। কেউ বা গোঁফে লাগা দুধের সর মুছে বলছেন, আহা কি স্বাদ! সৌজন্যে পুরুলিয়ার হুড়া থানার পুলিশের আটক করা ১৪১টি মোষ ও গরু।
লক্ষ্মীপুজোর রাতে ২৩টি পিকআপ ভ্যান ভর্তি মোষ ও গরু আটক করার পর থেকে কার্যত খাটাল হয়ে উঠেছিল এই থানা। প্রতিদিন সাতসকালে বোতল, জ্যারিকেন ভর্তি মোষ-গরুর দুধ পেয়ে বাসিন্দারা আহ্লাদে আটখানা। তবে নাভিশ্বাস উঠেছে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘দুধ না দুইলে পশুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। ভোর থেকেই কিছু সিভিক কর্মী ও স্থানীয় কয়েকজন তাই দুধ দুয়েছেন।’’ পুলিশ কর্মীদের দাবি, দৈনিক চারশো-পাঁচশো লিটার দুধ মিলছিল। তা বিলিই করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়েরা অনেকে বোতল, জ্যারিকেন, বালতি এনে দুধ ভরে নিয়ে গিয়েছেন।
বিহার থেকে মোষ ও গরুগুলিকে ডানকুনি এলাকার খাটালে নিয়ে যাওয়ার সময় পরিবহণের নথি দেখাতে না পারায় দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস অ্যাক্ট, ১৯৬০-সহ বেশ কিছু ধারায় চালক ও খালাসিদের গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই থেকে থানা চত্বরে দড়িতে বাঁধা ছিল এক পাল মোষ ও গরু। তাগড়াই চেহারার গবাদি পশুদের সামাল দিতে থানার কর্মী ও কিছু স্থানীয় বাসিন্দার হিমশিম দশা। তবে থানা থেকে দুধ বিলির খবরে খুশি আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। হুড়ার পাশাপাশি জবজবিগড়া, কেন্দবনা, লালপুরের কিছু মানুষও রোজ সকালে পাত্র নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় রাধাকান্ত খাঁ বলেন, ‘‘ভাল মানের দুধ। তাই চাঁচি (ক্ষীর বা খোয়া) তৈরি করে সবাই খাচ্ছি।’’ স্থানীয় সুজিত কুণ্ডুও জানালেন, এ দুধের স্বাদই আলাদা। থানার উল্টোদিকের চা-মিষ্টির দোকানদার লক্ষ্মণ কর বলেন, ‘‘আমি একাই অনেকটা দুধ নিচ্ছিলাম। আমার দোকানের কালাকাঁদ, পেঁড়া, স্পেশ্যাল চায়ের চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছিল।’’
তবে সুখ বেশি দিন সইল না। কারণ, শুক্রবারই বিধি মেনে গবাদি পশুগুলোকে জিম্মা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু থানা সূত্রের খবর, এত দিন মোষ-গরুগুলোর খাবারের জন্য এক ট্রাক খড় কেনা হয়েছিল। সঙ্গে পুলিশ ব্যারাকের আনাজের খোসা, ভাত, ভাতের মাড় জোগান দেওয়া হচ্ছিল।