ফাইল চিত্র।
একই দিনে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনের বিপুল সম্পত্তির খতিয়ান আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে পেশ করা হল। অনুব্রত ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ৪৫টি জমির দলিল শুক্রবার আদালতে দাখিল করা হয়েছে। অনুব্রতের রক্ষী এবং গরু পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সেহগালেরও সাতটি জমির ‘লিজ় ডিড’-এর খতিয়ানও আদালতে জমা দিয়েছে সিবিআই। সেই জমির পরিমাণ আড়াই একর বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের দাবি, অনুব্রত ও সেহগালের সম্পত্তির পরিমাণ গরু পাচারে মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তিকে ছাপিয়ে যেতে পারে।
গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের কাছ থেকে অনুব্রত, সেহগাল এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লার সম্পত্তির হিসেবের নথি চেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-ও। সিবিআইয়ের দাবি, সেহগালের বাড়ি এবং বিভিন্ন ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে নগদ টাকা, গয়না-সহ বিপুল বিষয়সম্পত্তির দলিল উদ্ধার করা হয়েছে।
তাঁর আয়ের সঙ্গে সম্পত্তির সঙ্গতি নেই, এই অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ আগে সেহগালকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। ওই অভিযুক্তকে শুক্রবার আদালতে তোলা হয়। দু’পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পরে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এই মুহূর্তে সেহগাল আসানসোল জেলে আছেন।
সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার এ দিন অনুব্রত এবং তাঁর পরিবারের অন্যদের নামে থাকা জমির দলিল আদালতে জমা দিলেও পরিবারের কোন সদস্যদের নামে জমি আছে, তা নির্দিষ্ট করে বলেননি। সিবিআই সূত্রের খবর, জমি রয়েছে অনুব্রতের প্রয়াত স্ত্রী ও মেয়ের নামে। সিবিআই আদালতে জানিয়েছে, ওই সব জমির অর্থমূল্য যাচাই করা হচ্ছে। অনুব্রতের জমিগুলি কোথায় আছে, সেই বিষয়ে সিবিআই কিছু জানাতে চায়নি। তাদের দাবি, অনুব্রত ও সেহগালের জমিগুলি একই সময় পর্বে (২০১৫ থেকে ২০২০-র মধ্যে) কেনা। সেহগালের সব জমিই মুর্শিদাবাদে।
কয়লা ও গরু পাচারের মামলায় সিবিআইয়ের পাশাপাশি তদন্ত করছে ইডি-ও। অনুব্রত, সেহগাল ও শওকতের বিষয়সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক আমানতের লেনদেন খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করতে চলেছে ইডি।
কয়েক সপ্তাহ আগে গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক আমানতের নথি নেয় সিবিআই। পরে কয়লা পাচার মামলায় ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা ও তাঁর আপ্ত-সহায়ক সাদেক হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা। তাঁদের কাছ থেকেও সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক আমানতের নথি সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা।
এ দিন শুনানির শুরুতেই সেহগালের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা মামলাটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর দাবি, সেহগালের বিরুদ্ধে ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে গরু পাচারের কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। বাংলাদেশেরও কেউ লিখিত ভাবে সেহগালের কাছ থেকে গরু কেনার কথা জানাননি। ওই আইনজীবী জানান, এই মামলায় অভিযুক্ত বিএসএফ আধিকারিক সতীশ কুমারকে গ্রেফতারের ৩২ দিনের মাথায় তিনি জামিন পান। সেহগাল ২৮ দিন জেল হেফাজতে আছেন। তাঁকেও জামিন দেওয়া হোক। অভিযুক্তের জামিনের বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার। তিনি জানান, তদন্তের বেশ কিছু প্রক্রিয়া বাকি আছে। ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আরও তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সেগুলির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। সেহগাল ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তি। তাই তাঁর জামিন পাওয়া উচিত নয়। সিবিআইয়ের আরও দাবি, সেহগালের বিরুদ্ধে এমন বহু তথ্য জোগাড় করা হয়েছে, যা চমকে দেওয়ার মতো।
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ এবং তদন্তকারী অফিসার সুশান্ত ভট্টাচার্যের কাছে জানতে চান, তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে আর কত দিন লাগবে? তাঁরা জানান, ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে। সেহগালের বাজেয়াপ্ত করা তাঁর মোবাইলটি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর জন্য এ দিন আদালতে আবেদন করেছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রের দাবি, ইতিপূর্বে আসানসোল জেলে থাকাকালীন সেহগালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি মুখ খোলেননি।