কেনা হয়েছে চিকিৎসা-সামগ্রী, মেটানো হয়নি টাকা

চিকিৎসাসামগ্রীর মধ্যে গ্লাভস, পেসমেকার, স্টেন্ট, হার্ট ভালভ, সিরিঞ্জ, ক্যাথিটার, সুতো, ইমপ্ল্যান্ট থেকে শুরু করে মাস্ক, ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার, আইভি ক্যানুলা, আইভি ড্রেসিং, সেন্ট্রাল লাইন—সব কিছু থাকে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০৪:৩৭
Share:

রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাসামগ্রী কেনার বিপুল টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। এই সব সামগ্রী মূলত ‘শ্যাডো ফান্ড’-এ কেনা হয়েছিল। যার অর্থ, মৌখিক ভাবে টাকা ছাড়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দিয়েছে এবং তার ভিত্তিতে জিনিস কিনতে নির্দেশও দিয়েছে। কিন্তু জিনিস কেনার পর তার বিল যখন ট্রেজারিতে যাচ্ছে তখন তা মেটানো যাচ্ছে না, কারণ বাস্তবে টাকা ছাড়া হয়নি।

Advertisement

এই ভাবে একাধিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রচুর চিকিৎসাসামগ্রী কেনা হয়েছে কিন্তু সরবরাহকারী সংস্থার টাকা মেটানো হয়নি। ওই সংস্থাগুলি এ বার জানাচ্ছে, বছরের পর বছর টাকা বাকি রেখে তাদের পক্ষেও জিনিসপত্র দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালগুলিও ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যভবনে চিঠি দিয়ে জানাতে শুরু করেছে যে, সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে এখনই কিছু টাকা মিটিয়ে না-দিলে নতুন করে চিকিৎসাসামগ্রী কেনা যাচ্ছে না।

চিকিৎসাসামগ্রীর মধ্যে গ্লাভস, পেসমেকার, স্টেন্ট, হার্ট ভালভ, সিরিঞ্জ, ক্যাথিটার, সুতো, ইমপ্ল্যান্ট থেকে শুরু করে মাস্ক, ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার, আইভি ক্যানুলা, আইভি ড্রেসিং, সেন্ট্রাল লাইন—সব কিছু থাকে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী কেনাকাটার ক্ষেত্রে মূলত বাম আমলে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এতে রাশ টানতে তৃণমূল আমলে অনলাইনে কেনার নিয়ম শুরু হয়। তাতে দুর্নীতি অনেকটাই কমেছে বলে খবর, কিন্তু ‘শ্যাডো ফান্ড’-এর নিয়ম চালু হতে কেনাকাটার টাকা মেটানো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে একাধিক স্বাস্থ্যকর্তাও মেনেছেন। স্বাস্থ্য ভবনে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী কেনাকাটার দায়িত্বে থাকা সচিব সঞ্জয় বনসল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিষয়টা আমরা দেখে নিচ্ছি। খোঁজ নিচ্ছি।’’

Advertisement

গত মে মাসের শেষে যেমন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্বাস্থ্যভবনে চিঠি দিয়ে বিপুল বকেয়ার কথা জানিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সেখানে ২০১৩-১৪ সালের টাকাও এখনও বাকি। ২০১৩-১৭-এর মধ্যে চিকিৎসাসামগ্রী কেনা হয়েছিল, ফলে মোট বাকি প্রায় ১০ লাখ টাকা। শুধু ২০১৭-১৮ তে বাকি প্রায় ৫০ লাখ টাকা। তার পরেও আরও বকেয়া রয়েছে। তারা অবিলম্বে দেড় কোটি টাকা চেয়ে পাঠিয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান স্বাস্থ্য জেলায় শুধু চলতি বছরে এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যেই প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা বাকি পড়েছে।

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে ২০১৮-১৯ সালে ‘শ্যাডো ফান্ড’-এর ৭৫ লক্ষ টাকা বাকি পড়েছে। এসএসকেএম হাসপাতালে এই বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা, পুরুলিয়া মেদিনীপুর কলেজে ২০১৮-১৯ এ ‘শ্যাডো ফান্ডের’ প্রায় ৮২ লক্ষ টাকা বাকি। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে গত অর্থবর্ষে ‘শ্যাডো ফান্ডের’ প্রায় ৩৬ লাখ টাকা মেটানো হয়নি। গত জুন মাসে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ স্বাস্থ্যভবনে ২ কোটি টাকা চেয়ে পাঠিয়েছে। কলকাতার বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ২০১৭-১৮ সালে ‘শ্যাডো ফান্ডের’ প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা ও ’১৮-১৯ এর প্রায় ২১ লক্ষ টাকা বাকি। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ২০১৮-১৯ সালে চিকিৎসাসামগ্রীর ‘শ্যাডো ফান্ডের’ প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা বকেয়া।

তার পরেও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে বহু জায়গায় ‘শ্যাডো ফান্ড’-এ চিকিৎসা সামগ্রী কেনা হয়েছে। যেমন, নীলরতনেই ২০১৯-২০ তে শ্যাডো ফান্ডের প্রায় ৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বাঁকুড়ায় বাকি প্রায় ১ কোটি টাকা। একাধিক সরবরাহকারী সংস্থা অভিযোগ করেছে, এই পরিস্থিতিতেও সপ্তাহখানেক আগে ফের এসএসকেএম, মেডিক্যাল, আরজিকর, নীরলতনের মতো একাধিক জায়গায় ‘শ্যাডো ফান্ড’ অনুমোদন করে জিনিসপত্র কিনতে বলেছে স্বাস্থ্য দফতর!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement