কলকাতার নামকরা ১২টি পুজো কমিটিকে ‘স্পনসর’ করতে এক বছরে খরচ দেখানো হয়েছে ২০ কোটি টাকা!
রোজ ভ্যালির সোনার ব্যবসা অদৃজা-র হিসেব পরীক্ষা করে এমনই তথ্য এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে। এঁরা বেশির ভাগই ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। কলকাতার খুঁটিনাটি জানেন না। ওই তথ্য হাতে পেয়ে কলকাতায় চেনা পরিচিতদের ডেকে তাঁরা জানতে চান, ‘‘আপনাদের এখানে খুব বড় পুজোর বাজেট সর্বোচ্চ কত টাকার হয়?’’
সেই বাজেট বড়জোর সওয়া কোটি টাকা শুনেই সন্দেহ ঘনিয়েছে তদন্তকারীদের মনে। তবে কি যে অঙ্কটা পুজো কমিটির খাতে অদৃজার অ্যাকাউন্টে লেখা রয়েছে, বাস্তবে তত টাকা তাদের দেওয়া হয়নি? ২০ কোটি দেখানো হলেও আসলে দেওয়া হয়েছে অনেক কম? বাকি টাকা সংস্থার কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুই খরচ করেছেন? তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘এটা তো সম্ভব নয় যে, এক বছরে শহরের প্রধান ১২টি বড় পুজোর পুরো টাকাটাই রোজ ভ্যালি দিয়েছে!’’
যে ১২টি পুজোর নাম সিবিআই পেয়েছে, তার সব ক’টাই কোনও না কোনও মন্ত্রী বা নেতার ‘নিজস্ব’ পুজো বলে খ্যাত। এঁরা সকলেই প্রভাবশালী। তদন্তকারীদের সন্দেহ, যে টাকা পুজো কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে, তার পুরোটা হয়তো পুজোর খাতে ব্যয় হয়নি। সিংহভাগ পকেটে পুরেছেন প্রভাবশালী ও তাঁর শাগরেদরা!
তদন্তে দেখা গিয়েছে, এই ১২টি পুজোর ক্ষেত্রে ‘স্পনসরশিপে’র টাকার একটা অংশ চেক মারফত এবং বাকিটা নগদে দেওয়া হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, যেমন একটি পুজো কমিটির খাতে ১ কোটি টাকা লেখা আছে। তার ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে চেক মারফত। বাকিটা নগদে। সব ক্ষেত্রেই নগদের ভাউচারগুলি রেখে দেওয়া রয়েছে। ফলে পরবর্তী কালে সেই পুজো কমিটির কর্তাব্যক্তিদের চেপে ধরতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
সিবিআই সূত্রের খবর, এই প্রতিটি পুজো কমিটিকে টাকার সঙ্গে অদৃজার বড় বড় ব্যানার, ফ্লেক্স, তোরণ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, শহরের প্রায় প্রতিটি পুজো কমিটিই তো এই ভাবে বাজার থেকে টাকা তুলে পুজো করে। এখানে অন্যায় কোথায়? তদন্তকারীরা বলছেন, অদৃজার অ্যাকাউন্টে তো এমন অনেক পুজো কমিটির উল্লেখ রয়েছে, যাঁদের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে এবং সেই খাতে টাকাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরিমাণ সিংহ ভাগ ক্ষেত্রেই ৫ লক্ষের বেশি নয়। আচমকা ১২টি পুজো কমিটির ক্ষেত্রে এত বড় বড় অঙ্ক দেখেই তদন্তকারীদের ভুরু কুঁচকেছে।
প্রয়োজনে এই ১২টি পুজো কমিটির গত কয়েক বছরের বিস্তারিত হিসেব চাওয়া হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। যদি হিসেবে দেখা যায়, অদৃজার কাছ থেকে তারাও অন্য পুজো কমিটিগুলির মতো ৫-৭ লক্ষ টাকা করে পেয়েছে, ধরে নিতে হবে, হয় গৌতম নিজে বাকি টাকা সরিয়েছেন। নয় পুজোর পৃষ্ঠপোষক প্রভাবশালী ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের পকেটে গিয়েছে বিশাল অঙ্কের টাকা! এই প্রমাণ আদালতে পেশ করা হবে।
পুজো কমিটির এই ‘স্পনসর’ সংক্রান্ত তদন্তে নেমে আরও একটি বিষয় জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। দক্ষিণ কলকাতার তিনটি পুজো কমিটির পুজোর সিঁদুর খেলায় অংশ নিতে দেখা গিয়েছে রোজ ভ্যালি কর্তার ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রীকে। সেই ছবি একমাত্র রোজ ভ্যালির চ্যানেলেই দেখানো হয়েছে। আবার অদৃজার হিসেব বলছে, ওই সিঁদুর খেলার জন্য সংস্থার কাছ থেকে ওই অভিনেত্রীকে কয়েক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।
বাজার থেকে যে ভাবে রোজ ভ্যালি টাকা তুলছিল, তাকে সেবি বেআইনি বলার পরেও পুজোর জন্য সেই সংস্থার টাকা অনুদান হিসেবে গ্রহণ করা আর্থিক অপরাধ এবং বিচারযোগ্য, বলছেন তদন্তকারীরা।
নজর যেখানে
• আদৌ কি পুজো কমিটিকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে?
• হিসেবে গোঁজামিল দিয়ে টাকা সরিয়েছেন গৌতম?
• পুজো কমিটি কি পুরো টাকা খরচ করেছে?
• নাকি নেতা, সঙ্গীদের পকেটে ঢুকেছে সিংহভাগ?