সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল এবং তৃণমূল নেতা রজত মজুমদার এখন জেল-হাজতে। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের বিভিন্ন শীর্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানে পা ফেলছে রাজ্য সরকার। কারণ, রজতবাবু শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরে সরকার তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এবং পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিরেক্টর করেছিল। শেষ পর্যন্ত তিনিই সারদা কাণ্ডে গারদে ঢোকায় রাজ্য এখন ঘোর অস্বস্তিতে।
অস্বস্তি যাতে আর না-বাড়ে, সেই জন্যই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের শীর্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করছে না রাজ্য। প্রায় ১৪ মাস ধরে ওই কমিশনের মাথায় কেউ নেই। তাতে কাজকর্মের ক্ষতি হচ্ছে খুবই। কমিশনের চেয়ারম্যান-পদে ডিভিসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল আগেই। কিন্তু হুট করে সেই সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করা হচ্ছে না। অন্তত কেন্দ্রের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার আগে তো নয়ই। তাই এত দিনে ওই পদে রবীন্দ্রবাবুকে বসানোর জন্য কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের ছাড়পত্র চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার।
বিদ্যুৎ কমিশনের শীর্ষ পদে রবীন্দ্রবাবুকে নিয়োগের ব্যাপারে পুজোর আগে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন বন্ধ। প্রশ্ন উঠেছে, এত দিনে তাঁর নিয়োগের ব্যাপারে কেন্দ্রের ছাড়পত্র চাওয়া হল কেন? প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, ডিভিসি-প্রধান থাকাকালীন রবীন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে কিছু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন তদন্ত করে বিদ্যুৎ মন্ত্রকে রিপোর্টও দিয়েছে। তাই রাজ্য সরকার এখন রবীন্দ্রবাবুকে নিয়োগের আগে বিদ্যুৎ মন্ত্রকের ছাড়পত্র চাইছে।
তা হলে রবীন্দ্রবাবুকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে কেন্দ্রকে চিঠি লেখা হল না কেন? কোনও বিদ্যুৎকর্তাই এই নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিদ্যুৎকর্তা রজতবাবুর নাম সারদা কাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়ার পরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের আগে সাবধানে পা ফেলতে চাইছে সরকার। শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পরে রজতবাবু জোড়া বিদ্যুৎ সংস্থায় উঁচু পদ পান। সারদার সঙ্গে সেই রজতবাবুরই সম্পর্কের অভিযোগ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে রাজ্যকে। তাই নিয়োগের আগে কেন্দ্রের কাছ থেকে রবীন্দ্রবাবু সম্পর্কে ‘ক্লিনচিট’ নিতে চাইছে বিদ্যুৎ দফতর।
এ ব্যাপারে রবীন্দ্রবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সময়মতো ঠিকই দায়িত্ব নেব। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে ছাড়পত্র চেয়েছে কি না, সেই ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।”
বিদ্যুৎ শিল্প মহলের অভিযোগ, দীর্ঘদিন কমিশনের মাথায় কেউ না-থাকায় বিদ্যুৎ-মাসুল নির্ধারণ প্রক্রিয়া থমকে আছে। কোনও কাজই হচ্ছে না। সমস্যায় পড়েছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা, পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম এবং সিইএসসি-র মতো সংস্থা।