সুবোধ সিংহ। —ফাইল চিত্র
রাজ্যের নানা স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত সুবোধ সিংহকে বিহারের জেল থেকে বাংলায় এনে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। এ বার ‘গোল্ডেন ডাকু’ সুবোধের এক সঙ্গীকেও এ রাজ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে খবর মিলল পুলিশ সূত্রে। তদন্তকারীদের আশা, সুবোধের এই সঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হাওড়ার ডোমজুড়ে ডাকাতির ঘটনার কিনারা করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে সুবোধের ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত বিকাশ ঝায়ের হদিসও মিলতে পারে বলে মত তদন্তকারীদের একটি সূত্রের।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পর গত রবিবার সুবোধকে বিহারের বেউর জেল থেকে রাজ্যে আনে সিআইডি। সুবোধের পাশাপাশি তাঁর কয়েক জন সঙ্গীর দিকেও অনেক দিন ধরে নজর ছিল গোয়েন্দাদের। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, সম্প্রতি ডোমজুড়ের সোনার দোকানে ডাকাতির ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসাবে তদন্তে রবীন্দ্র সাহানির নাম উঠে এসেছিল। তাঁর হদিস পেতেই হাওড়ার পুলিশকর্তারা বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিহার পুলিশও রবীন্দ্রের খোঁজে নেমে পড়ে। তাঁর মাথার দাম তিন লাখ টাকা ঘোষণা করা হয়। গোপন সূত্র মারফত খবর পাওয়া মাত্রই যৌথ অভিযান চালায় বিহার ও রাজ্য পুলিশ। ধরা পড়েন রবীন্দ্র। তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। বেগুসরাই থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ বার ট্রানজিট রিমান্ডে হাওড়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে তাঁকে। রবীন্দ্রের বিরুদ্ধে ৩১টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে।
গত মাসে চার সশস্ত্র দুষ্কৃতীর একটি দল ডোমজুড়ের একটি সোনার দোকানে ঢোকে। তার পর বন্দুকের কুঁদো দিয়ে মারধর করে, কর্মীদের বেঁধে লুটপাট চালায় তারা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাতির পর দলটি একাধিক বার ট্রেন বদলে বিহার পালিয়ে গিয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ডাকাতদলের চার জনকে শনাক্ত করেন গোয়েন্দারা। রবীন্দ্র সেই দলেই ছিলেন। তদন্তকারীদের সূত্র জানিয়েছে, রবীন্দ্রর পর তাঁদের ‘টার্গেট’ বিকাশ ঝা। বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা, বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত বিকাশকে ধরার জন্য ইতিমধ্যেই পুলিশের তরফে বিহার এসটিএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করছেন, জেলবন্দি সুবোধের সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল বিকাশের। বিকাশের কাছে রবীন্দ্রর মতো জনা পঞ্চাশেক ছেলে রয়েছে। যাঁরা বিকাশের নির্দেশে গোটা দেশে ডাকাতি করে বেড়ান। ওই দলটি যেখানে ডাকাতি করবে বলে ঠিক করে, সেই জায়গায় আগে থেকেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। এমনকি, ডাকাতিতে বাধা পেলে গুলি চালিয়ে খুন করতেও পিছপা হন না ওই দলের সদস্যেরা।
পুলিশের ওই সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে এ রাজ্যে সোনার দোকানে কিংবা স্বর্ণ ঋণ প্রদানকারী সংস্থায় যত ডাকাতি হয়েছে, তার অধিকাংশের সঙ্গে সুবোধ যেমন জড়িত, তেমনই জড়িত তাঁর ডান হাত বিকাশ। তাঁর বিরুদ্ধে সারা দেশেই মামলা রয়েছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘ভিন্ রাজ্যের ওই ডাকাত দলের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে।’’