মাস কয়েক আগে চোর সন্দেহে প্রহৃত এক যুবক মাঠের মধ্যে পড়েছিলেন সারা শরীরে আঘাত নিয়ে। বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ওই যুবককে বীরভূমের কাপিসটের ওই মাঠ থেকে তুলে বাড়িতে নিয়ে যান স্থানীয় এক বৃদ্ধ। সেবা-শুশ্রুষা করে হুগলির আরামবাগে বাড়িতে পৌঁছে দিতে গিয়ে দেখেন, পরিবার ওই যুবককে ফিরিয়ে নিতে নারাজ। বৃদ্ধ অবশ্য হাল ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত তাঁর উদ্যোগে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বুধবার ঘরে ফিরলেন যুবকটি। ওই যুবকের চিকিৎসা এবং পরিবারকে আর্থিক সাহাযেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আরামবাগ ব্লক প্রশাসন।
ওই যুবককে ঘরে ফেরাতে পেরে খুশি নূর ইসলাম খান নামে ওই বৃদ্ধ। তিনি বলেন, “পাঁচ মাস ছেলের মতো শুশ্রুষা করেছি ওকে।” আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুই বলেন, “যে ভাবে ওই ভদ্রলোক সুকুমারের সেবা করেছেন এবং বাড়ি ফেরাতে তৎপর হয়েছেন, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।”
বছর পঁচিশের ওই যুবকের নাম সুকুমার প্রামাণিক। বাড়ি আরামবাগের ঘোলতাজপুর গ্রামে। তাঁর পরিবারের লোকেরা জানান, মানসিক অসুস্থতার কারণে নবম শ্রেণিতে পড়া ছেড়ে দিতে হয়। একাধিক বার বাড়ি থেকে তিনি চলে যান। আবার নিজেই ফিরে এসেছে। এ ভাবেই পাঁচ মাস আগে যুবকটি নিখোঁজ হয়ে যান। কোনও ভাবে তিনি বীরভূম লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের একটি গ্রামে গিয়ে পৌঁছন। নূর ইসলাম জানান, সেখানে চোর সন্দেহে মারধর করে তাঁকে কাপিসটে মাঠে ফেলে রাখা হয়েছিল। সারা শরীরে তখন তাঁর দগদগে ঘা, তা থেকে পোকা বের হচ্ছিল। বৃদ্ধ নূরের পরিচর্যায় এখন আর ঘা নেই সুকুমারের শরীরে।
আঘাত সেরে যাওয়ার পরে যুবকের পরিচয় জেনে আরামবাগের ঘোলতাজপুরে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসেন ওই বৃদ্ধ। কিন্তু বাড়ির লোক তাঁকে ফিরিয়ে নিতে তেমন উৎসাহ দেখাননি। এর পরেই আরামবাগের বিডিও প্রনববাবুর দ্বারস্থ হন নূর ইসলাম। এ দিন দুপুরে ব্লক প্রশাসন এবং হরিনখোলা ২ পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধানে বাড়ির লোককে বুঝিয়ে ছেলেটিকে ঘরে ফেরানো হয়। বিডিও বলেন, “ওই যুবকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে পঞ্চায়েত। অর্থকরী সাহায্যের বিষয়টা আমরা দেখব।” পঞ্চায়েত প্রধান মিঠু ঘোষ গাড়িতে করে সুকুমারকে বাড়ি পৌঁছে দেন। বাবা রতনলাল প্রামানিক বলেন, “ছেলে ফিরে আসায় আমরা খুশি। পঞ্চায়েত তার চিকিৎসা করবে বলেছে। ব্লক প্রশাসন ভরণপোষণের ভার নেবে। ভালই হল।”
নূর ইসলামের বিশ্বাস, ভাল চিকিৎসা পেলে সম্পূর্ণ সেরে উঠবে সুকুমার।