মণ্ডপ না বইপাড়া, ভুল করলেন অনেকে

শীত এখনও পড়েনি বইমেলারও ঢের দেরি। কিন্তু জগদ্ধাত্রীর শহরে রাস্তার ধারে বইয়ের প্যাভিলিয়ন। থমকে গিয়েছিলেন কসবার মৌমিতা সান্যাল। মহাষ্টমীর সকাল থেকে অনেক মণ্ডপ ঘুরেছেন। টোটো চড়ে দক্ষিণ থেকে যাচ্ছিলেন উত্তর চন্দননগরের দিকে। পথে হাটখোলা ভুবনেশ্বরীতলায় বিশাল বইয়ের প্যাভিলিয়ন দেখে বুঝতেই পারেননি, এটা কোনও মণ্ডপ হতে পারে!

Advertisement

শুভ্র শীল

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫১
Share:

শুক্রবার মহাষ্ঠমীতে চন্দননগরের একটি মণ্ডপে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: তাপস ঘোষ।

শীত এখনও পড়েনি বইমেলারও ঢের দেরি।

Advertisement

কিন্তু জগদ্ধাত্রীর শহরে রাস্তার ধারে বইয়ের প্যাভিলিয়ন। থমকে গিয়েছিলেন কসবার মৌমিতা সান্যাল। মহাষ্টমীর সকাল থেকে অনেক মণ্ডপ ঘুরেছেন। টোটো চড়ে দক্ষিণ থেকে যাচ্ছিলেন উত্তর চন্দননগরের দিকে। পথে হাটখোলা ভুবনেশ্বরীতলায় বিশাল বইয়ের প্যাভিলিয়ন দেখে বুঝতেই পারেননি, এটা কোনও মণ্ডপ হতে পারে!

রাস্তার এক ধারে, মণ্ডপের দোরগোড়ায় কত না বইয়ের সম্ভার! শরৎ রচনাবলী, টেনিদা সমগ্র, প্রথম আলো, ফেলুদা সমগ্র, আনন্দমেলা রহস্য গল্প সংকলন, আরও কত কী! বড় বড় ফ্লেক্সে বইয়ের প্রচ্ছদ এমন ভাবে সাজানো, যা দেখে বইমেলায় বইয়ের প্যাভিলিয়নের কথাই দর্শকদের মনে পড়ে যাবে। ভিতরে পুরোপুরি লাইব্রেরির চেহারা। তাকে থরে থরে সাজানো কত না বই! দেওয়ালে দেওয়ালে ছবি। মণ্ডপের সিলিং থেকে খোলা অবস্থায় ঝুলছে বিশালাকার ‘কাকবাবু সমগ্র’-এর ষষ্ঠ খণ্ড।

Advertisement

হাটখোলা ভুবনেশ্বরীতলার এই থিম এ বার অনেককেই চমকে দিয়েছে। বই পড়ায় উৎসাহ বাড়াতে পুজো কমিটি থিমের নাম দিয়েছে ‘বই ধরো, বই পড়ো’। কমিটির সদস্য জয়ন্ত ঘোষ বলেন, “ভিতরে এক সদস্যেরই ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে চারশোরও বেশি বই রাখা হয়েছে।” উৎসবের কত যে রং!

মহাষ্টমীর সকালের দিকে রাস্তায় ভিড় ততটা ছিল না। উদ্যোক্তারা এ দিনের পুজো ছাড়াও ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন আজ, মহানবমীর পুজো নিয়ে। এ শহরে জগদ্ধাত্রী পুজোর এটাই প্রধান দিন। মণ্ডপে মণ্ডপে চলে ভোগ নিবেদন। পরে তা পাড়া-পড়শির মধ্যে বিতরণ করা হয়। শহরের বেশির ভাগ বাড়িতেই এ দিন রান্না হয়নি। ভোগ খাওয়ার ঢালাও ব্যবস্থা করেন উদ্যোক্তারা। তার জন্য কুপন বিলিও সারা হয়ে যায় অষ্টমীর মধ্যে।

উদ্যোক্তারা যখন নবমী পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত, তখন পুলিশি নিষেধাজ্ঞার শিথিলতার সুযোগ নিয়ে মহাষ্টমীর সকালে কেউ অটোয়, কেউ টোটোয়, কেউ বা মোটরবাইক-স্কুটারে সওয়ার হয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। হাটখোলা ভুবনেশ্বরীতলার অদূরেই হাটখোলা মনসাতলার মণ্ডপের সামনে দাঁড়ালে এক বার নিজের রাশি-লগ্নের কথা দর্শকদের মনে আসতেই পারে। কারণ, এখানকার থিমটাই যে ‘রাশিচক্র’।

ধরা যাক, কারও সিংহ রাশি। তাঁর শুভ রং যে বাদামি, শুভ সংখ্যা যে ৩, তা জানানোর ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা। বড় বড় ফ্লেক্সে যে ভাবে রাশিচক্রকে তার প্রতীক দিয়ে সাজানো হয়েছে, দর্শকদের মন টানবেই। মণ্ডপের ভিতরেও তুলে ধরা হয়েছে নবগ্রহ-সহ এই সৌরজগৎ। পুজো কমিটির সম্পাদক অভিজিৎ বন্দ্যেপাধ্যায় জানান, সাড়ে চার লক্ষ টাকা বাজেটের এই মণ্ডপে রাতে আলোর খেলায় সৌরজগৎ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এখানকার ভিড়টা ছুঁয়ে যাচ্ছে পাশের হাটখোলা নোনাটোলাকেও। প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ করে উদ্যোক্তারা খড় দিয়ে ৪৫ ফুটেরও বেশি উঁচু ধানের গোলা তৈরি করে ফেলেছেন। দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ দিতে মণ্ডপ লাগোয়া মাঠে আয়োজন করা হয়েছে মেলার। সেখানে রয়েছে ছোটদের বিনোদনের হরেক ব্যবস্থা।

হাটখোলা ভুবেনেশ্বরী তলার মণ্ডপ।

এ শহরের কাছাকাছির মধ্যে গলিঘুঁজিতেও এত বড় বড় পুজো হয় যে, দূরদূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের চমকের শেষ থাকে না। তেমনই এক গলির মধ্যে শুকসনাতনতলার মণ্ডপ বড় রঙিন বাঁশ, ফাইবার, বেতের ঝুড়ি, শিকলি দিয়ে তৈরি। মণ্ডপ প্রায় ৫২ ফুট উঁচু অনেকটা মন্দিরের আদলে। সেখানে মহামায়ার নানা রূপ। হাজির রাধাকৃষ্ণ এবং মহাদেবও। শহরের মূল সড়ক থেকে অনেকটা ভিতরে বৈদ্যপোতা সর্বজনীনেও ষষ্ঠী থেকেই ভিড় জমছে। এখানকার থিম রবীন্দ্রনাথের ‘হাট’। বিশাল মাঠের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ‘বক্সিগঞ্জের হাট’ বসিয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা এক দিকে কুমোর, কামার, সব্জি বিক্রেতারা বসে। পাশে পুকুরে বালকদের সাঁতার। অন্য দিকে ধানের গোলা, গরুর গাড়ির চাকা, গোয়াল। নিপুণভাবে মাটি লেপা ঘরদোর গ্রামবাংলার স্মৃতি উস্কে দেবেই। আদি হালদারপাড়া সর্বজনীন প্রতিবারই থিমে চমক দেওয়ার চেষ্টা করে। এ বার তারা বিষয় করেছে, ‘আমিই সেই মেয়ে’। অর্থাৎ, নারীদের জগৎ। সেখানে নারী নির্যাতনের ছবি যেমন রয়েছে, তেমনই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইন্দিরা গাঁধী, লতা মঙ্গেশকরের মতো কৃতী নারীদের কথাও। ভিতরে বাজছে ব্রততী বন্দ্যেপাধ্যায়ের আবৃত্তি।

জি টি রোড ধরে উত্তর দিকে এগোলে কত না থিম! কত না আলো! তার মধ্যে লালবাগান সর্বজনীনের দাবি, এ বার তারাই সবোর্চ্চ প্রতিমা বানিয়েছে। পুজো কমিটির পক্ষে অভিজিৎ দাস বলেন, “এ বার আমাদের শুধু প্রতিমার উচ্চতাই ২৬ ফুট। চালচিত্র নিয়ে আরও দশ ফুট বেশি।” মণ্ডপে চাকচিক্য না বাড়ালেও এ বার শোভাযাত্রায় তারা চমক দিতে চলেছে বলে দাবি করেছেন অভিজিৎ। তিনি জানান, শোভাযাত্রার আলোয় তাঁরা তুলে ধরবেন ‘মানব সভ্যতার বিবর্তন’।

রাত পোহালেই দশমী শুরু হয়ে যাবে। জগদ্ধাত্রীর শোভাযাত্রার তোড়জোড় তাই অষ্টমীর সকাল থেকে জি টি রোড তো বটেই, আশপাশের গলি, পেট্রল পাম্পেও দেখা গেল আলোর ট্রাক সাজানোর তোড়জোড়।

সময় আর বেশি নেই। তাই মহাষ্টমীর রাত যত গড়িয়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়। মণ্ডপ দেখা যেন বাকি থেকে না যায়!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement