আমাদের সরকার, আমাদের সময় আর আমরাই ঘরছাড়া! বৃহস্পতিবার আরামবাগের হরিণখোলার পূর্ব কৃষ্ণপুর লাগোয়া গ্রামগুলিতে ঘরছাড়া তৃণমূল পরিবারগুলিকে ঘরে ফেরাতে এসে এমনই খেদোক্তি শোনা গেল তৃণমূলের পরিষদীয় সচিব ও হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তর গলায়।
তবে এ দিন ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে পুলিশকে জেলা সভাপতির হুঁশিয়ারি, আকাশ-পাতাল যেখানেই থাকুক, জয়নাল খাঁ এবং নুরুল হুদাকে গ্রেফতার করতে হবে। গত সোমবার রাতে হামলার ঘটনার পর থেকে ওই দু’জনকে ধরতে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পূর্ব কৃষ্ণপুরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ঘর ভাঙচুর, মারধর, অগ্নি সংযোগের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বিজেপির ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও বুধবার সকালে আমগ্রাম লাগোয়া হরিণখোলা বাজারে বিজেপির নেতা রাজু মল্লিককে ছুরি মারার ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি। এই অবস্থায় সংখ্যালঘু সেলের বিজেপি ব্লক সভাপতি নাসিরুদ্দিন মোল্লার অভিযোগ, “অভিযুক্তদের ধরার ক্ষেত্রে পুলিশ পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে।” তাঁর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার তৃণমূলের লোকজন পুলিশের সামনেই পূর্ব কৃষ্ণপুরের সুমন ঘোষ নামে এক বিজেপি সমর্থককে মারধর করেছে। তাঁর হুমকি, অভিযুক্ত ধরার ক্ষেত্রে পুলিশ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করলে এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর দায়বদ্ধতা তাঁদের থাকবে না। গ্রেফতার নিয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ মানতে নারাজ পুলিশ। পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, তদন্ত চলছে। সেই অনুযায়ী অভিযুক্তদের ধরার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
তপনবাবুর অভিযোগ, বিজেপির ছত্রচ্ছায়ায় জয়নাল খাঁর পরিকল্পনা এবং নুরুল হুদার নেতৃত্বে পূর্ব কৃষ্ণপুরে তৃণমূল সমর্থক পরিবারে নারী নির্যাতন-সহ নানা অত্যাচার চলছে। তৃণমূলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কোনও মন্তব্য না করে জয়নাল বলেন, “আমি গ্রামে থাকি বা না থাকি, গ্রামে যে কোনও বিশৃঙ্খলা দেখলে গ্রামবাসীরাই প্রতিরোধ করবেন। এর জন্য ক্ষমতায় থেকেও লাভ নেই। অন্যায় দেখলেই ফের ঘরছাড়া হতে হবে। আমাদের এই গ্রামগুলোর এমনই ঐত্যিহ্য।” আর এক অভিযুক্ত সরকারি কর্মী নুরুল হুদা বলেন, “আমার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। দুর্বৃত্তায়নের প্রতিবাদ করাতেই ওঁদের ক্ষোভ।”
এদিন হরিণখোলা অঞ্চলের তৃণমূল নেতা পূর্ব কৃষ্ণপুরের পার্থ হাজারি সহ ঘরছাড়া মোট ৫৭ জন দলীয় কর্মী-সমর্থককে পুলিশি নিরাপত্তায় মিছিল করে ঘরে ফেরানো হয়েছে। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত এবং পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান। বুধবারই বিধায়কের নেতৃত্বে পূর্ব কৃষ্ণপুর লাগোয়া দোরজিপোতা গ্রামে তৃণমূল নেতা ফরিদ মিদ্যে, ছোট্টু নায়েক-সহ কয়েক জনকে ঘরে ফেরানো হয়। হামলায় যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বইপত্র লুঠপাটের অভিযোগ উঠেছিল সেই চন্দ্রা মালিকের বইপত্র কিনে দিয়েছেন বিধায়ক। এ ছাড়া এদিন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রিপল, পোশাক ও নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করা হয় দলের তরফে।
তপনবাবু বলেন, “ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানো হল। গ্রামে কোনও অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। গ্রামে পুলিশ পিকেট বহাল রাখতে বলা হয়েছে।”