তদন্ত: অভিজিৎ (বাঁ দিকে) ও বুটনকে (ডান দিকে) দিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
মদের আসরে হঠাৎ ঝামেলায় নয়, পুরনো শত্রুতার জেরে পরিকল্পনা করেই চুঁচুড়ার আয়মা কলোনির বাসিন্দা সুমিত সরকারকে খুন করা হয়। ধৃত সুমিতের দুই বন্ধুকে জেরায় এমনটাই জেনেছে পুলিশ। তবে, ওই দাবি কতটা সত্য তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীরা জানান।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বছর চব্বিশের ওই রং মিস্ত্রির মৃতদেহ মিলেছিল সমবায়নগর এলাকার একটি পুকুর থেকে। তাঁর পরিবারের দায়ের করার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই রাতেই গ্রেফতার করা হয় আয়মা কলোনিরই বাসিন্দা বুটন সিংহ এবং অভিজিৎ দাসকে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আরও দু’জন। তাদের মধ্যে একজন সুমিতের বন্ধু কার্তিক দাস ওরফে বান্টি। অন্যজন সুমিতের বন্ধু না হলেও সে দিন মদের আসরে হাজির ছিল। দু’জনেই পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে।
পুরনো শত্রুতা কী নিয়ে?
পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জানিয়েছে, বয়সে দু’-এক বছরের বড় সুমিত প্রায়ই তাদের চুরি, ছিনতাই-সহ নানা অসামাজিক কাজে নামার প্রস্তাব দিতেন। আপত্তি জানালে হুমকি দিতেন, মারধরও করেছেন। এ সবের জন্য সুমিতের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। সুমিতও তাদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের রাগ যায়নি। তা থেকেই সুমিতকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। কিন্তু গায়ের জোরে তারা সুমিতের সঙ্গে পারবে না বলে ধরে নিয়েছিল। তাই বৃহস্পতিবার তাঁকে ডেকে অতিরিক্ত মদ ও গাঁজা খাইয়ে দেয়। তারপরে রাস্তায় উইকেট দিয়ে মাথায় মেরে খুন করে।
পুলিশ জানিয়েছে, বহু বছর আগে সুমিতের বিরুদ্ধে মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছিল। গ্রেফতারের পরে তিনি জামিন পান। গত দু’বছরে অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তাই ধৃতদের দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার কয়েকদিন আগে সুমিত সপরিবারে নৈহাটিতে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ফেরার কথা পরে থাকলেও বন্ধুদের ডাকা মদের আসরের জন্য গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেরেন। তারপরে সমবায়নগরের কাছেই কারবালা এলাকায় ওই আসরে চলে যান। তদন্তকারীদের ধৃতেরা জানিয়েছে, আগে থেকেই কিছু উইকেট সেখানে জোগাড় করে রাখা ছিল। প্রায় টলতে টলতে সুমিত গভীর রাতে যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তারা পিছু নেয়। সমবায়নগরে রাস্তার ধারে প্রকৃতির ডাকে তিনি যখন সাড়া দিতে দাঁড়িয়েছেন, তখনই তাঁর মাথায় উইকেট দিয়ে মারা হয়। পরপর কয়েকবার আঘাতে একটি উইকেট ভেঙেও যায়। সুমিত বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও পারেনি। তাকে রাস্তায় ফেলে চড়-ঘুষি-লাথি মারা হয়। তারপরে মৃত্যু নিশ্চিত করে তাঁকে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। মদ্যপ অবস্থায় থাকায় পুকুর থেকে ওঠার ক্ষমতা ছিল না সুমিতের। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর পাকস্থলীতে পুকুরের পাঁক এবং মদ ছিল বলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে পুলিশ জেনেছে।
ওই রাতে সমবায়নগর এলাকার কিছু বাসিন্দা চেঁচামেচি শুনে গোলমাল টের পেয়েছিলেন। কিন্তু ভয়ে বেরোতে পারেননি। পরে হামলাকারীরা চলে গেলে তাঁরা গিয়ে প্রথমে রাস্তায় রক্তের দাগ দেখেন। পরে পুকুরে সুমিতের দেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে জানান। ধৃত বুটন এবং অভিজিৎকে নিয়ে রবিবার কড়া প্রহরায় সমবায়নগরের ঘটনাস্থলে গিয়ে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করায় পুলিশ।