Coronavirus Lockdown

‘দুর্নীতিগ্রস্ত’দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কী, প্রশ্ন তৃণমূলেই

সাংবাদিক বৈঠক ডেকে শো-কজ়ের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব। শেখ সাকিম ও আব্দুল মিদ্দের বিরুদ্ধে বিধি ভেঙে নদী থেকে বালি তোলার অভিযোগও ছিল।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০৪:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হুগলির ছয় নেতাকে শো-কজ় করে দলের ভাবমূর্তি উদ্ধারে সক্রিয় হয়েছিল তৃণমূল। অভিযুক্ত নেতারা তাঁদের লিখিত বক্তব্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জানিয়েও দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু তার এক সপ্তাহ পরেও তাঁদের সম্পর্কে অবস্থান স্পষ্ট না-করায় দলের ভাবমূর্তি ফের প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতাকর্মীদেরই একাংশ। সুযোগ পেয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরাও। শো-কজ়ের ঘোষণাকে ‘লোক-দেখানো’ পদক্ষেপ বলে তৃণমূলকে বিঁধতে শুরু করেছেন বিরোধী নেতারা।

Advertisement

আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম, ত্রাণ বণ্টনে দুর্নীতি-সহ নানা অভিযোগে গত ২৭ জুন শো-কজ় করা হয় আরামবাগের আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সোহরাব হোসেন, শ্যামপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আব্দুল মিদ্দে, খানাকুল-১ ব্লক যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি শেখ সাকিম, দাদপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাকির হোসেন মণ্ডল, ওই পঞ্চায়েতেরই সদস্য রূপম ভাবক ও ধনেখালির তৃণমূল নেতা রমজান আলিকে। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে শো-কজ়ের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব। শেখ সাকিম ও আব্দুল মিদ্দের বিরুদ্ধে বিধি ভেঙে নদী থেকে বালি তোলার অভিযোগও ছিল। যদিও সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে তাঁদের দাবি ছিল, ওই কাজে তাঁরা কোনও ভাবেই যুক্ত নন। অভিযোগ যে ভিত্তিহীন, তা তাঁরা প্রমাণ করে দেবেন।

দলীয় সূত্রের খবর, ওই ছয় নেতা তাঁদের শো-কজ়ের জবাব জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই। জেলা নেতৃত্বও তা নিয়ম মেনে পাঠিয়ে দেন রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। কিন্তু তারপর বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলা নেতারা। ওই ছ’জনের বিরুদ্ধে দল আদৌ কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে। রাজ্য নেতৃত্বের কোর্টে বল ঠেলে রবিবার দিলীপবাবুর মন্তব্য, ‘‘ওই ছ’জনের শো-কজ়ের জবাব রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে। রাজ্য নেতৃত্ব তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা অবশ্য বলেন, ‘‘হুগলি সমেত রাজ্যের অন্তত ৭০ জন দলীয় নেতা এবং পঞ্চায়েতের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। ওইসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে চণ্ডীতলা-২ ব্লকের গরলগাছা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মনোজ সিংহকে পদত্যাগ করতে বলে তৃণমূল। তিনি তা না-করায় দল তাঁকে বহিষ্কার করে। কিন্তু বাকি ছয় নেতা সম্পর্কে তৃণমূল তার অবস্থান না-জানানোয় তাঁদের ভবিষ্যৎ এবং দলের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শাসকদলের অন্দরেই। তাঁদের বিরুদ্ধে দল আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ও তৈরি হয়েছে। এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘সাংবাদিক বৈঠক করে শো-কজ়ের সিদ্ধান্ত তড়িঘড়ি জানিয়ে দিয়েছিলেন নেতারা। অভিযুক্তদের সম্পর্কে দলের অবস্থান কী, তা জানানো উচিত দলের। না-হলে দলের ভাবমূর্তি ফের প্রশ্নের মুখে পড়বে।’’

তৃণমূলের অন্দরে যখন বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই শাসকদলের উদ্দেশে তীর্যক মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা। তাতে তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বেড়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘ওঁদের এই সব পদক্ষেপ পুরোটাই লোক-দেখানো ব্যাপার। অন্যায়ের বিরুদ্ধে শাস্তি বলতে যা বোঝায়, তা ওঁরা নিতে পারবেন না।’’ বিজেপির শ্রীরামপুরের সাংগঠনিক সভাপতি শ্যামল বসুর খোঁচা, ‘‘ওঁদের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে দুর্নীতি। শাস্তি দিতে গেলে গোটা দলটাই উজাড় হয়ে যাবে। ওঁরা কতজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন?’’

বিরোধীদের কটাক্ষকে গুরুত্ব দিতে নারাজ দিলীপবাবু। তাঁর প্রতিক্রিয়া,‘‘আমরা নির্দিষ্ট সাংগঠনিক বিধি মেনে চলি। যা করার রাজ্য নেতৃত্ব করবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement