দিলীপ রাম। নিহত তৃণমূল নেতা।
গোটা এলাকা থমথমে, সুনসান। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ। বন্ধ দোকানপাট।
রবিবার ছুটির দিন সকালে চুঁচুড়ার বহু মানুষই গোটা সপ্তাহের দোকান-বাজার করেন। কিন্তু দোকান-বাজার খুলল কই? খড়ুয়াবাজারে কিছু দোকানপাট খুলেছিল। কিন্তু তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা জোর করে বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। দেখা মেলেনি বাস-অটোরও। সকালের দিকে কিছু টোটো চললেও চালকেরা বেশি ভাড়া হেঁকেছেন। সব মিলিয়ে তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম খুনের প্রতিবাদে এ দিন তৃণমূলের ডাকা ২৪ ঘণ্টার বন্ধে ভুগতে হয়েছে চুঁচুড়া বিধানসভা এলাকার বাসিন্দাদের। কেউ কেউ চন্দননগর থেকে দোকান-বাজার করে দুপুরে বাড়ি ফিরেছেন। দিনের শেষে তাই প্রশ্ন উঠেছে, যে তৃণমূল দীর্ঘদিন বন্ধ-অবরোধের রাজনীতি থেকে সরে এসেছিল, তারা কি আবার পুরনো রাস্তায় ফিরছে?
আচমকা এই বন্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্বেরও একাংশ। তাঁদের দাবি, ‘‘এই বন্ধে দলের কোনও অনুমোদন নেই। বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’’ যিনি এ দিনের বন্ধ ডেকেছিলেন, চুঁচুড়ার সেই তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের দাবি, ‘‘দলের কর্মী-সমর্থকদের আবেগের কথা ভেবে বন্ধ ডাকা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। না হলে অন্য কোনও ঘটনা ঘটে যেতে পারত। তা ছাড়া এলাকার মানুষও বিজেপি-র এই খুনের রাজনীতির বিরুদ্ধে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘দলীয় কর্মী খুন হয়েছেন। সে জন্য কর্মী-সমর্থকদের কথা ভেবে স্থানীয় বিধায়ক বন্ধ ডেকেছেন। এ নিয়ে কিছু বলার নেই।’’
জন্ম লগ্নের পর কয়েক বছর বিরোধী রাজনীতিতে তৃণমূল বন্ধ-অবরোধের রাস্তায় হেঁটেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে বাম শাসনের অবসান ঘটানোর কয়েক বছর আগে থেকেই তৃণমূল সেই রাস্তা থেকে সরে আসে। তাতে রাজ্যবাসীর কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে। বন্ধ-অবরোধের জেরে সার্বিক অস্থিরতাও স্তিমিত হয় রাজ্যে। হাঁফ ছাড়েন সাধারণ মানুষ। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে এ রাজ্যে তাদের সেই পুরনো রাস্তায় হাঁটতে দেখা যায়নি।
কিন্তু শনিবার ব্যান্ডেলে দলীয় নেতা দিলীপ রাম খুনের পরে যে ভাবে আচমকা রবিবার বন্ধ ডাকা হয়, তাতে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এর আগেও রাজ্যের নানা প্রান্তে তৃণমূল নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তো বন্ধ ডাকা হয়নি। তা হলে এ ক্ষেত্রে কেন হল? এ দিন চুঁচুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাজারগুলিও বন্ধ সমর্থকেরা জোর করে বন্ধ করতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী আপত্তি জানান। তৃণমূল অবশ্য সে অভিযোগ মানেনি। বিকেলে পিপুলপাতি থেকে ঘড়ির মোড় পর্যন্ত বিধায়ক অসিত মজুমদারের নেতৃত্বে মিছিল করে তৃণমূল।
তৃণমূলের কর্মসূচি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি চুঁচুড়ার বিজেপি নেতা স্বপন পাল। তিনি বলেন, ‘‘ লোককে দেখাতে তৃণমূলের আর কী-ই বা করার ছিল? রাজ্যে যেখানে যা-ই হোক, বিজেপিকে দায়ী করাটা এখন তৃণমূলের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ব্যান্ডেলের ঘটনাও তা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়বে।’’
তথ্য সহায়তা: চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য