আক্রান্ত প্রবীর চট্টোপাধ্যায় আরামবাগ হাসপাতালে। মঙ্গলবার। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
এক তৃণমূল নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠল তাঁর দলেরই কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে খানাকুলের ময়ালের ঘটনা। আক্রান্ত তৃণমূল নেতা প্রবীর চট্টোপাধ্যায়কে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গোটা ঘটনায় অভিযোগের তির স্থানীয় কিশোরপুর ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সন্দীপ বর এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সন্দীপবাবু। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলীয় কার্যালয় কার দখলে থাকবে তা নিয়ে কোন্দলের জেরেই ঘটেছে ওই ঘটনা।
তৃণমূল এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ময়ালের ওই কার্যালয় থেকেই কাজ চালাতেন সন্দীপবাবু। গত লোকসভা ভোটের পরে দলের কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্যকে নিয়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তৃণমূল কার্যালয়টিও দখল করে নেন বলে অভিযোগ। ঘটনার দশ দিনের মধ্যেই প্রবীরবাবুর নেতৃত্বে কার্যালয়টি পুনরুদ্ধার করেন তৃণমূলকর্মীরা। পরে সন্দীপবাবু রাজ্যের প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর হাত ধরে তৃণমূলে ফিরে আসেন। দলে প্রত্যাবর্তন ঘটলেও ওই কার্যালয়ের দখল তিনি পাননি। সম্প্রতি কার্যালয়টি দখলে আনতে তিনি চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বলে তৃণমূল একাংশের অভিযোগ।
প্রবীরবাবুর অভিযোগ, “সোমবার রাতে দলীয় কার্যালয়ে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করছিলাম দলের কয়েকজনের সঙ্গে। অনেকে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। আমরা তিন জন রাত ১১টা নাগাদ কাজ শেষ করে কার্যালয়ের দোতলা থেকে একতলায় নামতেই সন্দীপ ও তার লোকজন রড, লাঠি নিয়ে চড়াও হয়। রড ও লাঠির আঘাতে আমার মাথা ফেটে যায়। মুখেও আঘাত লাগে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এলাকায় খবরদারি চালানোর জন্য ও দলীয় কার্যালয়ের দখল নিতে চাইছে। সেই কারণেই এই সন্ত্রাস।”
ওই ঘটনার পরেই দ্রুত এলাকা ছাড়ে হামলাকারীরা। তারপর স্থানীয় কয়েকজন প্রবীরবাবুকে আরামবাগ হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁর মাথায় কয়েকটি সেলাই পড়েছে বলে দাবি।
মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ওই ঘটনায় লিখিত কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে দায়ের হয়নি। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ করার কথা বলা হয়েছে। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে।’’
এ দিকে, সন্দীপবাবুর দাবি, “ওই ঘটনার সঙ্গে আমার বা আমাদের ছেলেদের কোনও সম্পর্ক নেই। বাইক থেকে পড়ে গিয়ে উনি (প্রবীর) আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন।’’ দলীয় কার্যালয়ের দখল নেওয়া সংক্রান্ত যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে, সে সম্পর্কে সন্দীপবাবুর মন্তব্য, ‘‘ওই কার্যালয় আমার হাতেই তৈরি। আমি-ই ওকে সেখানে বসিয়েছি।”
ময়ালের ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। খানাকুল ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ বাগ বলেন, “বিষয়টা শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দলীয় স্তরে পদক্ষেপ করা হবে।”
এ দিন প্রবীরবাবুকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন কয়েকজন তৃণমূল নেতা।