ফাইল চিত্র।
চিন্তায় পড়লেন হুগলির দিলীপ যাদব, অরিন্দম গুঁইন, স্বপন নন্দী-সহ শাসকদলের অন্তত জনা দশেক নেতানেত্রী।
আসন্ন পুরভোটের জন্য পুরসভা ভিত্তিক যে খসড়া আসন বিন্যাসের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে হুগলির বিভিন্ন পুরসভার পদে থাকা ওই নেতানেত্রীদের নিজেদের ওয়ার্ড থেকে সরে যেতে হতে পারে। ফলে, জেলায় শাসকদলের অন্দরের ক্ষোভ চাপা থাকেনি। তাঁদের অনেকেই জেলাশাসকের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানানোর কথা প্রকাশ্যেই বলছেন। বিরোধীরা অবশ্য এখন জল মাপছেন। শাসকদলের ক্ষোভের মাত্রা কোন পর্যায়ে যায় তা দেখেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও জানান, নির্বাচন কমিশনের বিধিতেই আছে দু’সপ্তাহের ভিতরে কেউ তাঁদের বক্তব্য বা আপত্তি জানাতেই পারেন। এখন কেউ যদি আপত্তির কথা জানান, আমরা তা নির্বাচন কমিশনকে জানাব।
হুগলিতে মোট পুরসভার সংখ্যা ১৩। সব ক’টিই বর্তমানে তৃণমূলের দখলে রয়েছে। শুক্রবারে প্রকাশিত খসড়া তালিকায় দেখা যাচ্ছে, তিন পুরপ্রধানের ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে। তাঁরা হলেন— বৈদ্যবাটীর অরিন্দম গুঁইনের ওয়ার্ড (৩ নম্বর), উত্তরপাড়ার দিলীপ যাদবের ওয়ার্ড (২৩ নম্বর) এবং আরামবাগের পুরপ্রধান স্বপন নন্দীর ওয়ার্ড (১৩ নম্বর)। এ ছাড়া সংরক্ষণের আওতায় এসেছে বৈদ্যবাটীর উপ-পুরপ্রধান ব্রহ্মদাস বিশ্বাসের ওয়ার্ড (১৬ নম্বর), ডানকুনির উপ-পুরপ্রধান দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের ওয়ার্ড (১০ নম্বর), ভদ্রেশ্বরের উপ-পুরপ্রধান প্রকাশ গোস্বামীর ওয়ার্ড (১০) এবং আরামবাগের উপ-পুরপ্রধান আলমগির ওরফে রাজেশ চৌধুরীর ওয়ার্ড (১৫ নম্বর)। এ ছাড়াও সব মিলিয়ে বিভিন্ন পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ড থেকে হেভিওয়েট নেতাদের সরতে হতে পারে। ভেঙে দেওয়া চন্দননগর পুরবোর্ডের মেয়র রাম চক্রবর্তীর ওয়ার্ড (২৯ নম্বর) অক্ষত থাকলেও ডেপুটি মেয়র মায়া ঘোষের আসনটি (২ নম্বর) মহিলা সংরক্ষণের আওতার বাইরে চলে গিয়েছে।
এই তালিকা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শাসকদলের অন্দরে। বৈদ্যবাটীর পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমরা দলকে এ নিয়ে জানাব। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাই হবে।’’ ডানকুনির উপ-পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমি দল এবং জেলাশাসককে আমার আপত্তির কথা জানাব। বিচার না পেলে বিধি অনুয়ায়ী যা করার করব।’’
উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ তৃণমূলের জেলা সভাপতিও। নেতানেত্রীদের ক্ষোভের কথা তাঁর কানে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে আসন বিন্যাস হয়। অনেকেই গুজব ছড়ায়। দল প্রয়োজনে কাউকে প্রার্থী করে, আবার কেউ বাদ যান। দল যেটা চাইবে সেটাই হবে।’’
এই খসড়া তালিকা নিয়ে বিশেষ মন্তব্য করতে চায়নি বিরোধীরা। তবে, তাদের আশঙ্কা পুরভোটে গোলমাল হতে পারে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল কাকে কোথায় প্রার্থী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওরা যে নজিরবিহীন সন্ত্রাস করেছিল, তাতে ঘোর সন্দেহ আছে পুর নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ হবে!’’ বিজেপি-র জেলা নেতা স্বপন পালের দাবি, ‘‘যে ভাবে আমাদের জনসমর্থন বাড়ছে, তাতে আগামী নির্বাচনে শাসকদল ফের সন্ত্রাসের রাস্তায় হাঁটবে বলেই আমাদের আশঙ্কা। আসন বিন্যাসের তালিকা নিয়ে দলে আলোচনার পরেই এ নিয়ে বলব।’’