ঐতিহ্য: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি। ফাইল ছবি
রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের তালিকাভুক্ত কোন্নগরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগান বাড়ির সামনে আবাসন তৈরি নিয়ে তদন্ত শুরু করল জেলা প্রশাসন এবং রাজ্যের পরিবেশ দফতর।
সম্প্রতি পুরসভা সূত্রে জানা যায়, গঙ্গা লাগোয়া ওই বাগান বাড়ির ঠিক সামনে একটি বন্ধ কারখানার জমিতে ১৯ তলার আবাসন তৈরির পরিকল্পনা করছে কলকাতার একটি সংস্থা। শুধু তাই নয়, ওই আবাসন তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি ইতিমধ্যেই সাইট প্ল্যানের অনুমতি চেয়ে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছেন। এরপরই স্থানীয় বাসিন্দারা নড়েচড়ে বসেন। তাঁরা জেলা প্রশাসন এবং রাজ্যের পরিবেশ দফতরের কাছে ওই আবাসন তৈরি বন্ধের অনুমতি চান। তাঁদের যুক্তি, অবন ঠাকুরের বাগান বাড়ির সামনে ১৯ তলা আবাসন হলে ওই এলাকায় চরিত্রই নষ্ট হয়ে যাবে। বাগানবাড়িটির অদূরে গঙ্গা। খুব কাছেই জিটি রোড। ওই বাগান বাড়িটি গঙ্গা এবং জিটি রোডের মধ্যবর্তি জমিতে অবস্থিত। যে প্রযুক্তিতে ওই ১৯ তলা আবাসন হবে, তাতে পুরো অঞ্চলটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার উপর বাগানটির সৌন্দর্য্যও পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা চন্দননগর পরিবেশ আকাদেমি এবং আইন সহায়তা কেন্দ্রেরও দ্বারস্থ হন। এরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। রাজ্যের পরিবেশ দফতর এবং জেলা প্রশাসন, ওই দুই সংস্থাকে জানিয়ে দেয় বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবেন তাঁরা। তারপরই অবন ঠাকুরের বাগান বাড়ি এবং প্রস্তাবিত আবাসন প্রকল্পের এলাকায় সরেজমিনে তদন্ত করা হয়।
এই বিষয়ে পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অবন ঠাকুরের বাগান বাড়ি এবং জিটি রোড দুইই রাজ্য হেরিটেজ তালিকাভুক্ত। বিধি অনুয়ায়ী, কোনও ভাবেই ওই বাড়ির সামনে ও ভাবে আবাসন করা যায় না। তার উপর যে জায়গাটিতে আবাসনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি একটি বন্ধ কারখানার জমি। শিল্পের জমিতে কিন্তু শিল্প তৈরি করাই আইন। তার উপর উত্তরপাড়া, কোন্নগর পলিমাটি এলাকাভুক্ত এবং ভাঙন প্রবণ। আবাসনটি হলে শুধু অবন ঠাকুরের বাড়িই নয়, জিটি রোডও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঠিক এই কারণেই উত্তরপাড়ায় গঙ্গার পাড়ে ফিল্ম সিটির প্রকল্প থেকেও পিছিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার।’’
কোন্নগরের পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই আবাসন প্রকল্পের বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ দফতর তদন্ত শুরু করেছে। সরকারি আধিকারিকদের রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যা আইনসিদ্ধ নয়, এমন কোনও কাজ কিন্তু পুরসভা করবে না।’’
বারবার ফোন করলেও যোগাযোগ করা যায়নি ওই আবাসন সংস্থার সঙ্গে।