Coronavirus

হুগলির সব ভুয়ো ক্লাব খুঁজতে আর্জি শাসকের

কয়েকদিন আগেই জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও পীযূষ নন্দী

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ০৫:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি

লকডাউন-পর্বে আরামবাগের একটি ভুয়ো ক্লাব কী করে সরকারি অনুদান পেয়ে গেল, সেই প্রশ্নের এখনও মীমাংসা হয়নি। জেলাশাসক তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারপরে দু’মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তদন্তের গতিপ্রকৃতি কিছুই জানা যায়নি। এ নিয়ে জল্পনা এখনও অব্যাহত। এই আবহে ওই তদন্ত দ্রুত শেষ করা এবং হুগলির সব বিধানসভা এলাকায় ভুয়ো ক্লাবের অস্তিত্ব খুঁজতে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাল শাসকদল। পুরসভা এবং বিধানসভা ভোটের আগে একে শাসকদলের ‘বোকা বানানোর চেষ্টা’ হিসেবে দেখছেন বিরোধীরা।

Advertisement

কয়েকদিন আগেই জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। তিনি বলেন, ‘‘স্বচ্ছতার প্রশ্নে কোনও আপস নয়। আমরা চাই, আরামবাগে একটি ক্ষেত্রে যখন অভিযোগ উঠেছে, তখন অন্যান্য বিধানসভার ক্ষেত্রেও সার্বিক ভাবে বিষয়টি দেখা হোক। কোনও ক্ষেত্রে অনিয়ম রয়েছে কিনা।’’

জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘আরামবাগের ক্ষেত্রে জেলা যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া আধিকারিকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে জেলাশাসকের কাছে সেই কমিটিকে তদন্ত-রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হবে।” জেলা যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, লকডাউনের কারণেই তদন্তে দেরি হয়েছে। লকডাউন পুরোপুরি উঠে গেলে নথিপত্র খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

আরামবাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লিতে ‘নবপল্লি মাঠপাড়া সম্প্রীতি সঙ্ঘ’ নামে কোনও ক্লাবের অস্তিত্ব নেই। অথচ, এ বার ওই ক্লাবের নামে এক লক্ষ টাকা সরকারি অনুদান বরাদ্দ হয়েছে। গত ১১ এপ্রিল আরামবাগ থানা থেকে সেই চেক স্থানীয় তৃণমূল নেতা নীতীশ ভট্টাচার্য নিয়ে যান বলে অভিযোগ।

এ কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই জেলা জুড়ে হইচই শুরু হয়। রাজ্যে এমন বহু ভুয়ো ক্লাব ছড়িয়ে রয়েছে বলে বিরোধীরা সরব হন। সেই সময়ে গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারই স্বীকার করেছিলেন, গত তিন বছরে গোঘাটের পাঁচটি ভুয়ো ক্লাবকে চিহ্নিত করে তাদের অনুদান পাওয়া তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। মানসবাবু মানছেন, ক্লাবগুলিকে টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে একটি দালাল-চক্র কাজ করে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দলের স্বচ্ছতার প্রশ্নে কোনও আপস করতে পারব না।’’

উত্তরপাড়া বিধানসভা এলাকার কয়েকটি ক্লাবের ক্ষেত্রেও সরকারি অনুদান পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের অন্দরে। বিধি অনুয়ায়ী ক্লাবের টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিধায়ক এবং সাংসদের অনুমোদন ও শংসাপত্র লাগে। উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বলেন, ‘‘সাধারণত আমরা কাউন্সিলরদের থেকে যাচাই করে নিয়ে এ ধরনের অনুমোদন দিয়ে থাকি। উত্তরপাড়ার কোনও ক্লাবের ক্ষেত্রে বিধিভঙ্গ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে প্রশাসন তদন্ত করলে ভাল। স্বচ্ছতার প্রশ্নে সেটা জরুরিও।’’

আরামবাগ-কাণ্ড নিয়ে প্রথম থেকেই তদন্ত দাবি করে আসছিলেন সেখানকার বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা। তাঁর দলের জেলা নেতৃত্বও একই দাবি তোলায় সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এ বার সার্বিক ভাবে তদন্তে গতি আসবে। কিন্তু বিরোধীরা অন্য কথা বলছেন।

বিজেপি-র শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসু বলেন, ‘‘শাসকদলের জেলা সভাপতি তদন্ত চাইলেও আমাদের ভরসা নেই। প্রশাসন লোক দেখানো তদন্ত করে। এই তদন্ত চাওয়া মানুষকে স্রেফ বোকা বানানো।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘আরামবাগের তদন্ত রিপোর্ট এখনও কেন প্রকাশ হল না? সত্যিই যদি জেলার সর্বত্র ভুয়ো ক্লাব নিয়ে যথাযথ তদন্ত হয়, তা হলে শাসকদলের অনেক রাঘব-বোয়ালের জড়িত থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ক্লাবগুলোকে তাঁরাই মদত দেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement