পোলবায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত পুল কার। —ফাইল চিত্র।
শুক্রবার ঘড়িতে তখন প্রায় সকাল সওয়া সাতটা। রাস্তার ধারে মাচায় বসে চা খাচ্ছিলেন নবকুমার কোলে এবং ষষ্ঠী মল্লিক। তখনই প্রবল গতিতে নয়ানজুলিতে আছড়ে পড়ল পুলকার। পড়ুয়াদের চিৎকার শুনে সেখানে ছুটে গেলেন তাঁরা। জলে নেমে পড়লেন ষষ্ঠী এবং তাঁর মতো অনেকেই। পড়ুয়াদের দ্রুত উদ্ধার করলেন তাঁরা। বাড়ির লোক আসা ইস্তক তাদের ভরসা জোগালেন নিজেদের ছেলেমেয়ের মতো। অনেকেই মনে করছেন, পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনায় গ্রামবাসীরা সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে না পড়লে শিশুদের বিপদ বাড়ত।
নবকুমার ভ্যান চালান। বাড়ি কামদেবপুরেই। তিনি জানান, ষষ্ঠী দেখতে পান পুলকারটি বাচ্চাদের নিয়ে নয়ানজুলিতে পড়ে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সেখানে ছুটে যান। ততক্ষণে আরও গ্রামবাসী এসে জলে নামেন। নবকুমারের কথায়, ‘‘গাড়ির পিছনের দরজাটা খোলা যাচ্ছিল না। সবাই মিলে গাড়ির কাচ ভাঙা হয়।’’ নয়ানজুলির জলে শিশুরা ভিজে গিয়েছিল। তাদের গায়ে কাদা লেগে গিয়েছিল। জল দিয়ে ধুইয়ে কেউ নিজের চাদর দিয়ে বাচ্চাদের গা মুছিয়ে দেন, কেউ গামছা নিয়ে আসেন। মহিলারাও ওই কাজে হাত লাগান। জলে ভিজে যাতে বাচ্চাদের কাঁপুনি না ধরে সেই জন্য আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে তাদের স্থানীয় একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের পোশাক বদলে দেওয়া হয়। চা-দুধ, বিস্কুট দেওয়া হয়।
ততক্ষণে তিন জন পড়ুয়া এবং গাড়ির চালককে হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। বাকি পড়ুয়ারা আতঙ্কিত ঘটনার অভিঘাতে। গ্রামবাসীরা তাদের সাহস জোগান। স্কুলের ব্যাজ থেকে ফোন নম্বর দেখে প্রত্যেকের বাড়িতে ফোন করে খবর দেওয়া হয়। অভিভাবকরা এসে শিশুদের নিয়ে যান। প্রাথমিক ভাবে প্রত্যেককেই চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বছর ত্রিশের বুকাই সোরেন ঘটনার সময় কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ দেখি গাড়িটা আমাদের দিকে আসছে। ভয়ে সরে যাই। গাড়িটা নয়ানজুলিতে গিয়ে পড়ে। সবাই ছুটে গিয়ে জলে নেমে পড়ি। আশপাশের বাড়ির লোকেরা আসেন। কয়েকটা গাড়ি থেকে লোকেরা নেমে এসেও আমাদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত লাগান।’’ কবিতা মাণ্ডি নামে স্থানীয় ঝুপড়িবাসী এক মহিলা বাড়ি থেকে গামছা এনে শিশুদের ভেজা গা মুছিয়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের ছেলেমেয়ে মনে করেই আমরা বাচ্চাগুলোকে তুলেছি।’’ শিশুদের উদ্ধারের পরে পুলিশ ক্রেন এনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিকে নয়ানজুলি থেকে তোলে।
গ্রামবাসীদের ভূমিকায় কৃতজ্ঞ ঐশানী পাল নামে এক পড়ুয়ার মা ডলিদেবী। তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামবাসীরা আমাকে ফোন করে ঘটনার কথা জানান। গিয়ে দেখি, ওঁরা যথেষ্ট করেছেন। মেয়েকে যত্ন করে বসিয়ে রেখেছে। রাতেও ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন মেয়ে কেমন আছে।’’ পুলিশও জানিয়েছে, গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় শিশুদের দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।