পুরপ্রধানকে চিঠি দিলেন তারকেশ্বরের মহন্ত

উন্নয়ন পর্ষদের কাজে ক্ষুব্ধ মন্দির কর্তৃপক্ষ

সম্প্রতি টিডিএ-র কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মহন্তই। তারকেশ্বরের পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, পরিকল্পনা বর্হিভূত ভাবে কাজ করা হচ্ছে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০১:০০
Share:

বিতর্ক: এই রাস্তার কাজ নিয়েও সমস্যা। ছবি: দীপঙ্কর দে

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ শুরু করেছিল তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ (তারকেশ্বর ডেভলপমেন্ট অথরিটি বা টিডিএ)। ঠিক এক বছর আগে ওই কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ শুরু করে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বৈঠক করেছিলেন তারকেশ্বর মন্দিরের মহন্ত সুরেশ্বর আশ্রমের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীরই নির্দেশ ছিল— কোনও কাজ করা যাবে না মন্দিরের সঙ্গে পরামর্শ না করে।

Advertisement

জানা গিয়েছে, সম্প্রতি টিডিএ-র কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মহন্তই। তারকেশ্বরের পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, পরিকল্পনা বর্হিভূত ভাবে কাজ করা হচ্ছে। তারই ফলে মন্দির চত্বরের পবিত্রতা এবং নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। চিঠির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত। কিন্তু এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ তিনি। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘মন্দিরের কাজ নিয়ে টিডিএ কর্তারাই যা বলার বলবেন।
আমি নয়।’’

মহন্ত সুরেশ্বর আশ্রম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, দু’পক্ষের সমন্বয়ে কাজ হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে, মন্দিরের সঙ্গে আলোচনা না করে অনেক কাজ হয়ে যাচ্ছে। তারকেশ্বর এবং মন্দিরের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু দেখুন বর্ষা আসার আগেই জলে ভাসছে মন্দির চত্বর। এমন ভাবে রাস্তার কাজ হচ্ছে যাতে নিকাশির ক্ষতি হচ্ছে। এর পরে
কী হবে?’’

Advertisement

মন্দির কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা ভাবতে গিয়ে টিডিএ রাস্তা চওড়া করছে পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে। তাতে সমস্যা হবে মন্দিরের। পার্কিং লট ও দুধপুকুর পর্যন্ত রাস্তার পরিমাপ, মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মহন্ত। এমনকি আগাম পরিকল্পনা ছাড়াই দোকানদার সুবিধার্থে রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। এমনকি, পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত জমিও চাওয়া হচ্ছে— এমনই অভিযোগ মন্দির কর্তৃপক্ষের। জানা গিয়েছে, দুধপুকুর সংলগ্ন জমিতে একটি স্কুল চালান মন্দির কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন থেকে স্কুল লাগোয়া কিছুটা জমিটিও চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। মহন্ত বলেন, ‘‘ওই জমি আগেই স্কুলকে দেওয়া হয়ে গিয়েছে, এখন অন্য কাজের জন্য সে জমি আমি দেব কী করে!’’

তারকেশ্বরের দুধ পুকুরের উত্তর দিকেও রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা রাস্তাটি যতটা চওড়া করতে চেয়েছিলেন তার থেকে বেশি চওড়া করে তৈরি করছে টিডিএ। অভিযোগ, বাড়তি চওড়া রাস্তার প্রভাব পড়বে দুধ পুকুরের মূল ঢালেও। তাঁদের আরও অভিযোগ, দুধপুকুরের পাড়ে বসার জায়গা তৈরি করতে চাইছে টিডিএ। মহন্তর আশঙ্কা, দুধপুকুরের পাড়ে বসার অনুমতি দিলে তার প্রভাব পড়বে পুকুরের পবিত্রতায়। তিনি বলেন, ‘‘দুধপুকুর পবিত্র এলাকা। ওখানে বসে গল্প করার অনুমতি দেওয়া যায় না। কেউ যদি পুকুর পাড়ে বসেন, পুকুরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার দায়িত্ব তা হলে আবার আলাদা ভাবে করতে হবে। এ সবের কোনও প্রয়োজন ছিল না।’’

প্রশ্ন উঠছে মন্দির সংলগ্ন রাজবাড়ি নিয়েও। জানা গিয়েছে, রাজবাড়ির সামনে পার্কিং এলাকার জমির মধ্যেই ছ’টি দুঃস্থ পরিবার বাস করত। মন্দির কর্তৃপক্ষই তাদের বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু রাজবাড়ি চত্বর দিয়েই সাধারণের যাতায়াতের ব্যবস্থা করছে টিডিএ। এতেই ক্ষুব্ধ মহন্ত। তিনি বলেন, ‘‘এখনই মন্দিরের বেনেপুকুরের জলে মদের বোতল ফেলা হয় হোটেল থেকে। এরপর কী হবে? সে সব কথাও ভাবুক উন্নয়ন পর্ষদ। বেশ কয়েক দিন ধরেই দেখছি আমার অনুপস্থিতিতে নানা রকম পরিকল্পনা বহির্ভূত কাজ হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো যাতে বন্ধ হয়, সে জন্যই পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement