গোলমালের অভিযোগে এক চাকরিপ্রার্থীকে পুলিশের লাঠি। ছবি: সুব্রত জানা।
আগের দিনের মতো বৃহস্পতিবারও উলুবেড়িয়ায় ব্যাঙ্কে ঢুকে টেট পরীক্ষার ‘ডিপোজিট স্লিপ’ জোর করে নিয়ে ইচ্ছেমতো বিলি করার চেষ্টা করল একদল বহিরাগত যুবক। এ দিন সকাল দশটা থেকে টেট পরীক্ষার ফর্ম বিলি শুরু হয়। বেলা দেড়টা পর্যন্ত সেই কাজ সুষ্ঠু ভাবে চললেও তারপর বহিরাগতেরা ব্যাঙ্কে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে এ দিন পুলিশ বহিরাগতদের রুখতে সক্রিয়তা দেখায়। ওই যুবকদের বের করে দেয় পুলিশ। তবে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠি চালানোর অভিযোগ তুলেছেন। হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বুধবার বিকেলেও উলুবেড়িয়ায় বহিরাগত যুবকেরা ব্যাঙ্কে ঢুকে ডিপোজিট স্লিপ তুলে যথেচ্ছ বিলি করে বলে অভিযোগ। বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর মিলেছে হুগলিতে।
এ দিন উলুবেড়িয়ায় টেট পরীক্ষার ফর্ম তুলতে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক চাকরিপ্রার্থী। পুলিশ জানিয়েছে, অসুস্থ যুবকের নাম টোটন মণ্ডল। তাঁর বাড়ি স্থানীয় জোয়াড়গড়ি গ্রামে। টোটনের থাকা কয়েক জন যুবক জানান, বুধবার রাত ২টো থেকে তাঁরা ফর্ম তোলার জন্য ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা নাগাদ টোটন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় ও ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, বুধবার উলুবেড়িয়ার ব্যাঙ্ক থেকে ফর্ম না পেয়ে কয়েকশো চাক রিপ্রার্থী ব্যাঙ্ক সংলগ্ন দোকান ও রাস্তার উপর বসে পড়েন। রাত দু’টো থেকেই আবার নতুন করে লাইন দেওয়া শুরু করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে ফর্ম বিলি। তবে তারপরেও কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী লাইনে দাঁড়িয়েও ফর্ম পাননি। কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ, ৫০০ টাকার বিনিময়ে ব্যাঙ্কের সামনের দিকের লাইন ‘বিক্রি’ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ব্যাঙ্ক খোলার পর থেকেই লাইন দেওয়া নিয়ে অশান্তি শুরু হয়। এ দিন ব্যাঙ্কের আশপাশে কোনও মহিলা পুলিশ চোখে পড়েনি। দুপুর একটা নাগাদ পুলিশ চাকরিপ্রার্থীদের উপর মৃদু লাঠিচার্জ করে।
ফর্ম না পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেও অনেক চাকরিপ্রার্থী ব্যাঙ্কের আশপাশে থেকে গিয়েছেন। এ দিন হাওড়া ময়দান ও কদমতলাতেও টেটের লাইনে বিক্ষিপ্ত গোলমাল হয়। কদমতলায় লাইন ভেঙে ঢুকে বহিরাগতরা ফর্ম তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে চাকরিপ্রার্থীরা। যদিও হাওড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কোনও অভিযোগই মানেনি।
হুগলির চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টে থেকে লাইন শুরু হয়। ধনেখালির বাসিন্দা অনামিকা মণ্ডল ও বলাগড়ের বাসিন্দা কমল মজুমদার-সহ অনেক চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ দু’দিন লাইন দিয়েও টেটের ফর্ম মেলেনি। আরামবাগের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে বুধবার রাত ৯টা থেকে টেটের ফর্ম নেওয়ার লাইন পড়েছিল। ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, বিকেল ৩টের পরে লাইনে দাঁড়ানো চাকরিপ্রার্থীদের টোকেন দেওয়া হয়। তবে সন্ধ্যা ৬টার পরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রযুক্তিগত সমস্যার জন্য এ দিন আর ফর্ম দেওয়া হবে না। তারপরেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার খানেক চাকরিপ্রার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ তাঁদের দিকে লাঠি উঁচিয়ে তে়ড়ে যায়। গোলমালের সময়ে এক মহিলা-সহ দু’জন চাকরিপ্রার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দু’দফায় অবরোধ করা হয় আরামবাগ লিঙ্ক রোড।