চুঁচুড়া পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত নথি ভর্তি বাক্স। —নিজস্ব চিত্র
হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে এ বার জেলা প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। ওই নিয়োগকে ঘিরে সামনে এসেছে পুরসভার বাক্সরহস্যও!
ওই পুরসভার ‘গ্রুপ-সি’ এবং ‘গ্রুপ-ডি’ পদে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সেই নিয়োগ ইতিমধ্যে বাতিল করেছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবু বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না পুরসভার। নিয়োগে বিধিভঙ্গ হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতেই রাজ্য সরকার জেলা প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। বুধবার রাতে সেই নির্দেশ এসে পৌঁছয়। এর মধ্যে পুরসভার অন্দরে জলঘোলা হচ্ছে দু’টি টিনের বাক্সের হদিশ না-মেলায়।
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ওই নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষা হওয়ার পর মোট ১৪টি বড় টিনের বাক্সে সিল করা অবস্থায় পরীক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার খাতা এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ নথি আনা হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, রয়েছে মাত্র ১২টি বাক্স!
পুরসভার অর্থ বিভাগের এক বর্ষীয়ান কর্মী বলেন, ‘‘সরকারি নথি কোথাও গেল? কারাই বা সরাল? যাঁরা পুরসভার বেআইনি নিয়োগে সরাসরি যুক্ত তারাই কি পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে?’’
দু’টি বাক্সের গায়েব হয়ে যাওযার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা বর্তমান প্রশাসক গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়। তবে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, সে কথা শুনেছি।’’
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্তের জন্য একটি কমিটি গড়া হবে। কমিটিতে বাছাই অফিসারদের রাখা হবে। তাঁরা বিচার-বিবেচনা করে কাজ করবেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা সদ্য সরকারি নির্দেশ পেয়েছি। কারা পুরসভার ওই নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করবেন, তা এখনও আলোচনার স্তরে আছে। এখনই আগ বাড়িয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
বিরোধীরা অবশ্য সরকারি তদন্তের উপরে পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না। বিজেপি-র হুগলি (সদর) সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আর যাই হোক, তৃণমূলের প্রশাসনিক তদন্তে আস্থা রাখার ন্যূনতম জায়গা আছে কি? এই তো ভুয়ো ক্লাবের নামে আরামবাগের তৃণমূল নেতা টাকা তুলে নিলেন। জেলাশাসক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তদন্তের ফল কী আমরা আজও জানতে পেরেছি?’’
বিদায়ী পুরবোর্ডের বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সমীর মজুমদার বলেন, ‘আমরা নীতিগত ভাবে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি উপরই জোর দেব। যদি সত্যিই নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষার কোনও ট্রাঙ্ক খোওয়া গিয়ে থাকে তা হলে সরকার নির্দেশিত তদন্তকারী দলকেই চুঁচুড়া থানায় নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করতে হবে। না হলে আমরা বুঝে নেব।’’