প্রতীকী ছবি
বোর্ড গঠন হয়েছে দু’বছর আগে। অথচ, এ পর্যন্ত কাজে ছন্দ ফিরল না আমতা-১ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে। শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে শুরু থেকেই হোঁচট খেয়েছে ওই পঞ্চায়েত। গত আড়াই মাস ধরে সব কাজকর্ম কার্যত থমকে গিয়েছে। কারণ, প্রধান শেখ ফারুক গ্রামছাড়া।
করোনা আবহে গরিব গ্রামবাসী যে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করে দু’পয়সা ঘরে আনবেন, উপায় নেই। তাঁদের মজুরির বিলে সই করবেন কে? চতুর্দশ এবং পঞ্চদশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের লক্ষ লক্ষ টাকা এসে পড়ে রয়েছে। বসবাস সংক্রান্ত শংসাপত্র, জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র, ট্রেড লাইসেন্স— কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। ফলে, গ্রামবাসীর ক্ষোভ জমছে।
পঞ্চায়েত পরিচালনায় প্রধানই শেষ কথা। তিনি না-থাকায় সমস্যা যে গভীর, মানছেন বিডিও লোকনাথ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘উপপ্রধানকে কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কিছু কাজ পঞ্চায়েত সমিতিকে দিয়ে করানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। তাতে সার্বিক সমস্যা মিটবে না। আমি দু’বার প্রধানকে চিঠি দিয়ে অফিসে আসতে বলেছি। উত্তর পাইনি। ফের চিঠি দেওয়া হবে। তাতেও উত্তর না-পেলে কিছু একটা করতে হবে।’’
প্রধানের দাবি, ‘‘আমি গ্রামে ঢুকলে দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন আমাকে খুনের হুমকি দিচ্ছে। তাই আমি এবং প্রায় চারশো অনুগামী গ্রামের বাইরে আছি।’’ দলে প্রধানের ‘বিরোধী’ বলে পরিচিত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রজব আলির পাল্টা দাবি, ‘‘ফারুক এত অপকর্ম করেছেন যে তাঁকে গ্রামবাসীরাই তাড়িয়ে দিয়েছেন। এর সঙ্গে আমাদের গোষ্ঠীর কোনও সম্পর্ক নেই।’’
ওই পঞ্চায়েতে মোট ১১ জন সদস্য। ২০১৮-র ভোটে সকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতেন। প্রথমে প্রধান হন শেখ মোশারফ। সেই সময়ে একটি মামলার জেরে পুলিশের ভয়ে ফারুক গ্রামে ঢুকতে পারছিলেন না। পরে ফারুক জামিন পেলে মোসারফ পদত্যাগ করেন। ফারুক প্রধান হন।
তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, ওই পঞ্চায়েত এলাকায় দলের দুই গোষ্ঠীর একটির মাথা ফারুক। অন্যটির আসফার মিদ্দা। উপপ্রধান রজব তাঁরই অনুগামী। প্রধান হওয়ার পরেই আসফার, রজব এবং সাত পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ ওঠে ফারুকের বিরুদ্ধে। আড়াই মাস আগে গ্রামে একটি খুনের ঘটনায় ফারুকের কিছু অনুগামীর নাম জড়ায়। তাঁরা গ্রামছাড়া হন। সেই সুযোগে পুলিশ এবং দলীয় নেতৃত্বের সহায়তা নিয়ে আসফার এবং তাঁর অনুগামীরা ফেরেন। তখন গা ঢাকা দেন ফারুক।
ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ফারুক যখন মাত্র দু’জন সদস্যকে নিয়ে পঞ্চায়েত চালাচ্ছিলেন, তাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন ১০০ দিনের প্রকল্প-সহ যে সব কাজে প্রধানকে সই করতে হয়, তার কিছুই হচ্ছে না। পঞ্চায়েতে অচলাবস্থার কথা মানছেন উপপ্রধান। তিনি প্রধানের পদত্যাগেরও দাবি তুলেছেন। আসফারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, আড়াই বছরের আগে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায় না। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন। ফারুক বলেন, ‘‘কোনও গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করে পদত্যাগ করব না। আমাকে গ্রামে যেতে দিতে হবে। গ্রামবাসীরা চাইলে তবেই পদত্যাগ করব।’’
এলাকার বাসিন্দা তথা উলুবেড়িয়া উত্তর যুব তৃণমূল সভাপতি শেখ আবদুল্লা পঞ্চায়েতটির অচলাবস্থার কথা জানেন। তিনি বলেন, ‘‘ফারুকের সঙ্গে কেউ নেই। পঞ্চায়েতের ৯ সদস্য গ্রামেই আছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের দিয়ে মানুষের স্বার্থে উন্নয়নমূলক কাজ করানোর জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি।’’