জোড়া-তাপ্পি: সিঙ্গুরের বড়া থেকে দিল্লি রোডের মধ্যবর্তী ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত চলছে। —নিজস্ব চিত্র
বহু প্রতীক্ষার পরে ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত হয়েছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে। কিন্তু উদ্বোধনের এক মাস গড়াতে না গড়াতেই ফাটল ধরেছে রাস্তায়। পিচরাস্তার চেহারা হয়েছে অনাবৃষ্টিতে ফুটিফাটা চাষের জমির মতো। কোনও অংশ বসে গিয়েছে বলে অভিযোগ। শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুর থেকে সিঙ্গুরের বড়া যাওয়ার রাস্তার এমনই হাল।
ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে গাড়িচালক। রাস্তা সংস্কারের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। যদিও সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের দাবি, রাস্তার নীচের জলের পাইপ ফেটে বিপত্তি ঘটেছে। ভারী গাড়ি চলায় ফাটল আরও বেড়েছে। ফাটল বোজানোর কাজ শুরু হয়েছে।
শ্রীরামপুরের নওগাঁ মোড় থেকে পিয়ারাপুর, বড়া, কাঁপাসহাড়িয়া, বেগমপুর, জনাই হয়ে চণ্ডীতলা বাজার পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার রাস্তার কাজ গত বছরের শেষ দিকে হাতে নেয় পূর্ত দফতর। রাস্তাটি জিটি রোড, দিল্লি রোড, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে এবং অহল্যাবাঈ রোডকে যুক্ত করেছে। প্রকল্প ব্যয় প্রায় ২৬ কোটি টাকা। প্রশাসন সূত্রের খবর, বেগমপুর স্টেশন থেকে আদান পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ ছাড়া বাকি রাস্তার কাজ কার্যত শেষ। সংস্কার হওয়া রাস্তার ঘটা করে উদ্বোধনও হয়। এরপর থেকেই রাস্তা থেকে পিচ ওঠা শুরু হয়।
শ্রীরামপুর আদালতের আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জনাইয়ের বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কাজ শেষ না হতেই এই অবস্থা! কাঁচামালের মান ঠিক ছিল কিনা, পদ্ধতি মেনে রাস্তা তৈরি হয়েছে কিনা, সবটা তদন্ত করা দরকার। সব টাকা কি রাস্তার পিছনে খরচ হয়নি?’’ জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা সন্দীপ চক্রবর্তী ওই রাস্তা ধরে শ্রীরামপুরে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তাটি দীর্ঘদিন খারাপ ছিল। সংস্কার হতেই আবার ভেঙে যাচ্ছে! নিম্নমানের জিনিস নাকি কারিগরি সমস্যা, রাস্তার এমন অবস্থার জন্য দায়ী কে? বৃষ্টিতে আরও না ভেঙে যায়!’’ ক্ষুব্ধ মিল্কি বাদামতলা এলাকার বাসিন্দা গণেশ পালও।
পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার (শ্রীরামপুর) উৎপল মাইতি কয়েক মাস আগে ওই পদে যোগ দিয়েছেন। সোমবার তিনি রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের তদারকি করেন। উৎপলবাবু বলেন, ‘‘রাস্তার নীচ দিয়ে বিভিন্ন দফতরের জলের পাইপ গিয়েছে। পাইপ ফেটেই রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি সেই সব দফতরকে জানানো হয়েছে।’’ পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানান, চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার সংস্থা কাজ শেষের তিন বছর পর্যন্ত রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করবে। বর্ষা বিদায় নিলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পাকাপাকি ভাবে সংস্কার করবে।
এক নজরে
• রাস্তা তৈরির খরচ ২৬ কোটি টাকা
• মোট দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার
কাজ শুরু হয় গত বছরের শেষ নাগাদ
• ১৬ কিলোমিটার সংস্কারের কাজ সম্পূর্ণ
• পিয়ারাপুর থেকে বড়া যাওয়ার রাস্তায় ফাটল
• রাস্তার নীচে পাতা বিভিন্ন দফতরের পাইপ ফেটেছে
• ভারী যানবাহন চলাচলে বাড়ছে রাস্তার ফাটল
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের পাইপ ফেটেই সমস্যা হয়েছে। অথচ ওদের সবুজ সঙ্কেত নিয়েই কাজ করা হয়। বিষয়টি ওই দফতরকে জানানো হয়েছে।’’ জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ভূগর্ভস্থ পাইপ ফাটতেই পারে। তবে, ওই রাস্তায় এমন সমস্যার কথা জানা নেই। বিষয়টি নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখব। সমস্যা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ভারী যানবাহন (ওভারলোডেড) চলাচলও রাস্তার এমন হালের জন্য দায়ী বলে মনে করছে পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, যে সব ভারী গাড়ি অহরহ যাতায়াত করে, তাতে রাস্তার পক্ষে ওই ভার সহ্য করা কঠিন। ডানকুনিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজ়া এড়াতে ‘ওভারলোডেড’ বহু গাড়ি পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে এই রাস্তা হয়ে দিল্লি রোড ধরে বলে অভিযোগ। সেই কারণে এলাকাবাসী এই রাস্তাকে ‘টোল ফাঁকি দেওয়া সড়ক’ও বলে থাকেন। পুলিশ অবশ্য অভিযোগ মানেনি।
অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ির ভার এই রাস্তা কতদিন বইতে পারবে, উঠছে প্রশ্ন।