নির্জন: রাত তখন ৯টা। বীরশিবপুরের ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক প্রায় সুনসান। ছবি: সুব্রত জানা
হায়দরাবাদ-কাণ্ডের জেরে পুলিশের টনক নড়ল হুগলিতে।
মহিলাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে রবিবার রাত থেকেই চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে বাড়তি নজরদারি শুরু হল হুগলি শিল্পাঞ্চলে। কমিশনারেটের আওতাধীন ৯টি থানার আইসি-কেই এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর। জারি হয়েছে নির্দেশ। সাধারণ পুলিশকর্মীরা পদ্ধতি মেনে সেই কাজ করছেন কিনা, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে পদস্থ পুলিশকর্তাদের।
তবে, রবিবার ছুটির দিন থাকায় ট্রেনে-বাসে যাত্রী কম ছিল। রাস্তাঘাটও ফাঁকা ছিল। আজ, সোমবার থেকে নজরদারিতে কোনও শিথিলতা বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছি না। বিশেষত তরুণী-যুবতীদের ক্ষেত্রে পুলিশকে বাড়তি সতর্ক করা হয়েছে। অনেক মহিলা রাতে কর্মস্থল থেকে ফেরেন। বিশেষত স্টেশন চত্বরগুলিতে তাঁদের সুরক্ষার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। সাধারণ পুলিশকর্মীরা পদ্ধতি মেনে কাজ করছেন কিনা, বিষয়টি নিশ্চিত করতে পদস্থ পুলিশ কর্তারাও নজরদারি চালাবেন।’’
হায়দরাবাদের অনতিদূরে শাদনগরে গত বৃহস্পতিবার এক তরুণী পশুচিকিৎসককে ধর্ষণের পরে খুন করে দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। যা নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। ওই ঘটনায় সেখানকার পুলিশের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হুগলি শিল্পাঞ্চলে এমন অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতেই তৎপর হয়েছে চন্দননগর কমিশনারেট।
এমনিতে রাতে পুলিশের রুটিনমাফিক টহল চলে শিল্পাঞ্চলের সর্বত্র। এ বার সেই নজরদারিও আরও বাড়ছে। মূলত পেশাগত কারণে বহু মহিলা রাতের ট্রেনে ফেরেন। স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার জন্য কেউ নিজের সাইকেল বা স্কুটি নেন, কেউ বা অটো-টোটো ধরেন। অনেকে আবার হেঁটে ফেরেন। পুলিশকর্তারা জানান, প্রতিটি থানাকেই রাতে টহলদারি পুলিশ ভ্যানের সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে। শহরের নির্জন এলাকায় সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারিও বেশি রাখতে বলা হয়েছে। যাতে নির্জন রাস্তার সুযোগ দুষ্কৃতীরা কাজে লাগাতে না পারে। বিশেষত, স্টেশন লাগায়ো রাস্তাগুলিতে।
বিপদে পড়লে মানুষ যাতে সাহায্য চাইতে পারেন, সে জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ‘১০০ ডায়াল’-এর প্রচার করা হয়। কিন্তু অনেক সময়েই ওই নম্বরে ফোন করে সাড়া মেলে না বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়েও পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ওই নম্বরে ফোন এলে তা যেন গুরুত্ব সহকারে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কমিশনারেটের পুলিশ কন্ট্রোলের ল্যান্ডলাইন নম্বরও (০৩৩-২৬৮০-২৩৮১/ ২৩৮২) বিলি করা হয়েছে।
বহু যাত্রীর অভিযোগ, পূর্ব রেলের হাওড়া-ব্যান্ডেল মেন শাখার আপ এবং ডাউন— দু’দিকের বিভিন্ন স্টেশন চত্বরেই রাত বাড়লে মাতালদের উপদ্রব বাড়ে। প্রতিটি স্টেশন লাগোয়া এলাকায় বেআইনি মদের কারবারও চলে। অনেক স্টেশন চত্বরে পর্যাপ্ত আলো নেই। দুষ্কৃতীরা তার সুযোগ নিতে পারে, এ আশঙ্কাও রয়েছে। রেল পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, স্টেশন চত্বরে নজরদারি রাখা হচ্ছে। প্রতিটি স্টেশনে রাতে রেল সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানেরা প্রহরায় থাকছেন। বিপদে পড়লে যাত্রীরা রেল পুলিশকে ফোন করতে পারেন।