দীর্ঘ সাত বছরের ‘লড়াই’-এ অবশেষে সাফল্য মিলল হাওড়ার পাঁচলার গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের। স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজি মাধ্যমের জন্য চার জন শিক্ষক পাঠাল স্কুল সার্ভিস কমিশন। তিন শিক্ষক ইতিমধ্যেই যোগ দেওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শঙ্কর খাঁড়া বলেন, ‘‘শিক্ষকের অভাবে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে গেলেও আমরা ওই বিভাগটি বন্ধ করিনি। শিক্ষা দফতরকে ধন্যবাদ শিক্ষক পাঠানোর জন্য।’’ নতুন উদ্যমে তাঁরা ইংরেজি মাধ্যমের জন্য ছাত্র জোগাড়ের কাজে ঝাঁপাবেন বলে জানান স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা তথা পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সন্তোষ দাস।
২০১০ সালে রাজ্য শিক্ষা দফতর ঠিক করে, কয়েকটি স্কুলে বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজির পৃথক বিভাগ খোলা হবে। আবেদনপত্র ঝা্ড়াই-বাছাই করে পরের বছর হাওড়া (গ্রামীণ) এলাকায় একমাত্র গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরকে ইংরেজিতে পঠনপাঠন চালানোর জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। স্কুলে আগে থেকেই বাংলা মাধ্যমে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা ছিল। অনুমতি মেলায় ইংরেজি মাধ্যমের জন্য পৃথক ভবন তৈরি করা হয়। বিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয়। স্কুলের তরফ থেকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বেছে নেওয়া হয়। তাদের স্কুলের হস্টেলে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। ইংরেজি বিভাগের জন্য আলাদা বই কিনে দেওয়া হয়।
শুরুর দিকে ইংরেজিতে দক্ষ, স্কুলের এমন বাছাই করা শিক্ষকদের দিয়ে পঠন-পাঠন চালানো হয়। এ ছাড়া সংলগ্ন বিএড কলেজে পড়তে আসা ছাত্রদের দিয়ে এবং স্থানীয় ভাবে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করে পঠন-পাঠন চালানো হয়। প্রথম বছরে ভর্তি হয় ২৩ জন পড়ুয়া। ২০১৩ সালে তারা ইংরেজি মাধ্যমেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। সকলে প্রথম বিভাগে পাশ করে।
পঠন-পাঠন চালু করার সঙ্গে সঙ্গে ২০১১ সালেই ইংরেজি মাধ্যমের জন্য পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অঙ্ক এবং জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক চেয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শকের মাধ্যমে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে আবেদন জানান ওই স্কুলের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষক মেলেনি। এর পরে বারবার সংশ্লিষ্ট নানা দফতরে আবেদন জানিয়েই যাচ্ছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে জানানো হয়, উপযুক্ত শিক্ষক না পাওয়ার ফলেই সমস্যা হচ্ছে। ২০১৫ সালে দু’জন শিক্ষককে পাঠানো হলেও তাঁরা আসতে চাননি। এ দিকে, শিক্ষক না-থাকায় পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত গড়ে বছরে ২০ জন করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হত, তা কমতে থাকে ২০১৫ সাল থেকে। শেষ দু’বছর পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় মাত্র ৪ জন। এ বছর ভর্তি হয়েছে দু’জন।
এ বছর বাজেট বিতর্কের সময়ে বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যে আলাদা করে ইংরেজি মাধ্যম উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল করার কথা ঘোষণা করেন। সেইসব স্কুলে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলেও তিনি জানান। তারপরেই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করে গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দির কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষকের অভাবে এই বিভাগ উঠে যেতে বসেছে।
স্কুল সূত্রে খবর, শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানানোর পরে নড়েচড়ে বসে স্কুল শিক্ষা দফতর। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষক পাঠানো হবে বলে স্কুলকে জানিয়ে দেওয়া হয়। সপ্তাখানেক আগেই রসায়ন, অঙ্ক এবং জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পদার্থবিদ্যার শিক্ষকের নাম স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি সপ্তাহখানেকের মধ্যে যোগ দেবেন।