গঙ্গা পাড়ের স্ট্র্যান্ড যেন প্যারিসের শ্যেন নদীর তীর!
শ’য়ে শ’য়ে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ভিড় জমাচ্ছিলেন সকাল থেকে। কারও মুখ রাঙা ফ্রান্সের তেরঙায়, কারও হাতে ভুভুজেলা, কারও হাতে এমবাপের ছবি!
হঠাৎ শুরু রায়বেঁশে নাচ। তারপর বেজে উঠল ঢোল। মাঝেমধ্যে ফুটবল নিয়ে জাগলিং। কেউ আবার অকারণে দৌড়চ্ছেন!
রবিবারের দুপুর। বিশ্বকাপ শুরু হতে তখনও কয়েক ঘণ্টা বাকি। ফ্রান্সের সমর্থনে ভিড় উপচে পড়ল এক সময়ের ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগরের স্ট্র্যান্ডে। ফ্রান্সের সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দ যেখানে শেষ করেছিল হুগলির এই শহর, এ দিন যেন সেখান থেকেই শুরু হল হই-হুল্লোড়! পুরো কার্নিভাল! প্রতিটি আলোর স্তম্ভে বসে গিয়েছিল ফ্রান্সের ছোট ছোট পতাকা।
রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফ্রান্স দু’গোলে এগিয়ে। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া জমি ছাড়তে চায়নি। তার মধ্যেও আনন্দ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করতে চাননি ফ্রান্স সমর্থকরা।
সন্ধে নামতেই ভিড় এত বাড়ল, স্ট্র্যান্ডে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিল পুলিশ। রাস্তা চলে গেল ফুটবলপ্রেমীদের দখলে। সাড়ে ৮টায় রেফারির বাঁশি বাজতেই ফ্রান্স সমর্থকদের চিৎকারে তখন কান পাতা যায়। সকলে যেন রাশিয়ার গ্যালারিতে বসে!
রবীন্দ্রভবনের গেটের পাশে বিজ্ঞাপনের স্ট্র্যান্ডে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। নীচের ব্যানার জানান দিচ্ছিল— এই উদ্যোগ স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের। ভিড় জমল সেখানে। এক সময়ে উপস্থিত হলেন চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তীও। খেলার শুরুর দিকে ক্রোয়েশিয়ার পর পর আক্রমণ য়খন ফ্রান্সের দিকে আছড়ে পড়ছিল, কিছুটা মুষড়ে ছিলেন আগত ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু ১৮ মিনিটের মাথায় ক্রোয়েশিয়ার গোলে বল জড়াতেই আবেগ লাগমছাড়া। আবার চিৎকার। আবার পরিস্পরকে জড়িয়ে ধরা। ৩০ মিনিটের মাথায় ক্রোয়েশিয়া সমতা ফেরাতেই সকলে কিছুটা ম্রিয়মান। তার পরে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার কিছুকক্ষণ আগে পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্স ফের এগিয়ে যেতেই আবার শুরু সেই পতাকা নিয়ে দৌড়। তারপর আরও দুই গোল। সে উচ্ছ্বাস আর চাপা পড়েনি ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় গোলেও।
এই উচ্ছ্বাসে গা ভাসাতে এসেছিলেন পল্লিশ্রীর কলেজ ছাত্রী সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘দুপুর থেকে বন্ধুরা মিলে সময় কাটালাম। খুব মজা হল। মনেপ্রাণে ফ্রান্সের জয় চেয়েছিলাম। ফুটবল যে কত মজার খেলা, এ বার বুঝলাম।’’
ভিড়ে মিশেছিলেন এক প্রৌঢ়ও। তিনি আগমার্কা আর্জেন্টিনা সমর্থক। কিন্তু ফ্রান্স সেমিফাইনালে যেতেই তিনি কিছুটা তাদের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘আর বাড়িতে থাকতে পারলাম না। চলে এলাম।’’
কার্নিভালের মজাটা সকলকেই ভরিয়ে দিয়েছে। কুড়ি বছর পর আবার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। আওয়াজ উঠল— ‘হিপ হিপ হুররে’!