ডোমজুড়ে মন্দা।
বছর তিনেক আগেও হাওড়া ও মেটিয়াবুরুজের হাট মিলিয়ে সপ্তাহে পাঁচ লক্ষ টাকার জামাকাপড় বিক্রি করতেন তিনি। এখন সেই বিক্রি ঠেকেছে এক লক্ষে। তাই মন ভাল নেই শাঁখারিদহের জাকির মুফতির।
রেডিমেড কাপড় তৈরির কারখানা রয়েছে তাঁর। উৎপাদন কমাতে হয়েছে শ্রমিকও। কারখানায় তিন বছর আগেও যেখানে ৩৫ জন কারিগর কাজ করতেন এখন সেখানে কাজ করছেন মাত্র ১০ জন। দর্জির সংখ্যা কমে যাওয়ায় জাকিরের কারখানার যন্ত্রে ধুলো জমছে। তাঁর কারখানায় ১৬টি যন্ত্র আছে। কিন্তু কাজ নেই। তাই চালু আছে মাত্র ৮ টি যন্ত্র।
নোটবন্দির জেরে হাওড়ার রেডিমেড কাপড় শিল্পে এমন দুরবস্থা শুধু মুফতির নয়। তাঁর মতো আরও ১০ হাজার কারিগর ও ওস্তাগররাও।
নোটবন্দির জেরে কাজ কমতে কমতে ঠেকেছে তলানিতে। রোজগারের আশায় শ্রমিকরা যোগ দিচ্ছেন কারখানায়, অনেকে একশো দিনের কাজেও।
ডোমজুড়ের বাঁকড়া, কোলড়া, নিবড়া, শাঁখারিদহ, বানিয়াড়া, অঙ্কুরহাটি, ডোমজুড় প্রভৃতি এলাকায় ঘরে ঘরে হয় রেডিমেড কাপড় তৈরির কাজ। অন্তত ১০ হাজার পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এই জামা-কাপড় যায় বিহার, ওড়িশা, অসম-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। হাওড়ার মঙ্গলাহাট, মেটিয়াবুরুজের হাটে এই এলাকার ওস্তাগররা কারখানার জামাকাপড় বিক্রি করেন। ওস্তাগরদের অভিযোগ, সেই হাটগুলিতে রমরমা আর নেই। ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীদের যেমন আসা বন্ধ হয়েছে তেমনই এই রাজ্যের জেলা থেকেও কমে গিয়েছে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। ফলে বিক্রি কমেছে।
কেন এমন হাল?
ওস্তাগররা জানান, প্রথম আঘাত আসে নোটবন্দির সময়ে। বাজারে নগদের জোগান কমে যায়। ফলে ভিন রাজ্য থেকে ব্যবসায়ীদের আসা কমতে থাকে। জাকির বলেন, ‘‘ভিন রাজ্যের বহু ব্যবসায়ী জামাকাপড় কেনা কমিয়ে দেন। অনেকেই আবার আর আসেনও না। নগদের অভাবে অনেকে ব্যবসা তুলে দিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের জামাকাপড় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাই বেশি কেনেন। কিন্তু তাঁদের হাতেই তো টাকা নেই।’’ আলমগিরের খরিদ্দার ছিলেন মূলত অসমের বাঙালি ব্যবসায়ীরা। আলমগিরের কথায়, ‘‘অসম থেকে বাঙালি ব্যবসায়ীরা আর আসছেন না।
ক্ষতির জন্য জিএসটিকেও দুষছেন ব্যবসায়ীরা। রেডিমেড ব্যবসায় জিএসটি-র হার ৫ শতাংশ। তবুও এর জন্য নিয়মিত হিসাব রাখার ঝামেলা নিতে আগ্রহী নন অধিকাংশ ওস্তাগর। সাবির মুফতি নামে এক ওস্তাগর বলেন, ‘‘সরকারের উচিত ওস্তাগররা সবাই যাতে জিএসটি করান তার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং বিশেষ অভিযান চালানো। এই শিল্পের দিকে তো সরকারের নজরদারিই নেই।’’
রেডিমেড কাপড়ের কর্মীরা মূলত আসেন পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া প্রভৃতি এলাকা থেকে। নন্দীগ্রামের শেখ জাহাঙ্গির ১৫ বছর ধরে এই কাজ করছেন। তিনি উৎপাদনভিত্তিক মজুরি পান। নোটবন্দির আগে তিনি মাসে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করেছেন। এখন মাসে ১০ হাজার টাকা রোজগার করতে তাঁর কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। তিনি জানান, অনেক কারিগরই চাষের কাজে নেমে পড়েছেন, কেউ বা যোগ দিয়েছেন ১০০ দিনের কাজে।