ডানকুনিতে একটি বিস্কুট কারখানার সামনে বিক্ষোভ (বাঁ দিকে)। বৈদ্যবাটীতে লোহার যন্ত্রাংশ তৈরি কারখানায় শ্রমিকদের ঢুকতে বাধা বন্ধ সমর্থকদের। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যতিক্রম শুধু চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিল।
হুগলিতে ১০টি জুটমিলের মধ্যে শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া বন্ধ। বাকি মিলগুলিতে বন্ধে উৎপাদন কার্যত না হলেও ব্যতিক্রম হয়ে রইল গোন্দলপাড়া। আড়াই বছর বন্ধের পরে ওই জুটমিল সম্প্রতি খুলেছে। সেই কারণে ওই জুটমিলকে এলাকাগত ভাবে ধর্মঘটের আওতা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে এফসিএমইউ-র সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস দত্তের দাবি, ‘‘ধর্মঘটে জুটমিল শ্রমিকদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান দীর্ঘদিন দেখা যায়নি।’’
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন কল-কারখানার সামনে বন্ধ সমর্থকরা মিছিল করেন। চাঁপদানির ডালহৌসি, নর্থব্রুক জুটমিলে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি। এআইটিইউসি-র জেলা সম্পাদক প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘রিষড়ার ওয়েলিংটন, হেস্টিংস-সহ বিভিন্ন চটকলের শ্রমিকরা শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।’’ জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের দাবি, ডানকুনি, বাঁশবেড়িয়ার শিল্পাঞ্চল, জুটমিল সর্বত্র শ্রমিক সার্বিক ভাবে বন্ধে সাড়া দিয়েছেন। একই বক্তব্য আইএনটিইউসির রাজ্য সহ-সভাপতি অজিত চক্রবর্তীর।
মগরা, বাঁশবেড়িয়া, ভদ্রেশ্বর, শ্রীরামপুর, রিষড়া প্রভৃতি জায়গায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু কারখানা চালু। তবে অধিকাংশ জায়গাতেই হাজিরা স্বাভাবিক ছিল না। বৈদ্যবাটীতে লোহার যন্ত্রাংশ তৈরির একটি কারখানায় শ্রমিকদের ঢুকতে বাধা দেন বন্ধ সমর্থকেরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। ডানকুনির একটি বিস্কুট কারখানার সামনে বন্ধ সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখান।
কংগ্রেস এবং বামপন্থী বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের দাবি, কেন্দ্রীয় শ্রম আইনের কারণে শ্রমিকদের দুর্দশার যে অন্ত থাকবে না, শ্রমজীবী মানুষ তা বুঝেছেন। তাই তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন। এআইএইটিইউসি-র সর্বভারতীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শ্রমিকদের শোষণ করছে মালিক শ্রেণি। তাতে মদত দিচ্ছে সরকার। এই বন্ধ করে শ্রমিকরা তাদের যথাযথ বার্তা দিয়েছেন। এই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।’’
আইএনটিটিইউসি নেতৃত্বের দাবি, জুটমিলে সে ভাবে কাজ না হলেও অন্যান্য কারখানায় উৎপাদন হয়েছে। সংগঠনের জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউতের বক্তব্য, যে বিষয়গুলি নিয়ে বন্ধ ডাকা হয়েছে, সেগুলি তাঁরাও সমর্থন করেন। তা বলে বন্ধকে সমর্থন করেন না। তাঁর সংযোজন, ‘‘বন্ধের বিরুদ্ধে আমরা প্রচার করিনি। তবে এই বন্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেসের খেলা। পিছন থেকে বিজেপির মদতও থাকতে পারে। এতে কারও কোনও লাভ হল না।’’