ফাইল চিত্র।
অর্থবর্ষ শেষ হতে চলল। কিন্তু হাওড়া জেলায় সংখ্যালঘু অসহায় মহিলাদের বাড়ি তৈরির প্রকল্পে হাওড়া জেলায় একটি পয়সাও এল না। ফলে, জেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার অসহায় মহিলার নামের তালিকা চূড়ান্ত হলেও তাঁরা এখনও মাথার উপরে ছাদ পেলেন না। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, প্রাপকদের নামের তালিকা এবং তাঁদের বিস্তারিত বিবরণ সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা না-আসায় প্রাপকদের হাতে তুলে দেওয়া যায়নি।
২০১৩ সালে চালু হওয়া ‘ডেস্টিচিউড মাইনরিটি উইমেনস রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম’ নামে ওই প্রকল্পটিতে টাকা দেয় রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা সংক্রান্ত দফতর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে রয়েছে ওই দফতর। মূলত তাঁরই উদ্যোগে অসহায় সংখ্যালঘু মহিলাদের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়।
কিন্তু কেন টাকা এল না?
রাজ্য সংখ্যালঘু দফতর সূত্রের খবর, টাকা না-পাওয়ার সমস্যা শুধু হাওড়ার নয়, প্রতিটি জেলায়। কিন্তু কেন টাকা দেওয়া হয়নি তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি রাজ্য সংখ্যালঘু দফতরের কর্তারা। হাওড়া জেলায় এই প্রথম টাকা না-আসার ঘটনা ঘটল।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, দু’টি বা চারটি কিস্তিতে এই প্রকল্পে দেওয়া হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা বা অহিবাহিত অসহায় সংখ্যালঘু মহিলা, যাঁদের থাকার নিজস্ব বাড়ি নেই তাঁদের জন্যই প্রকল্পটি করা হয়েছে। বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং সাংসদরা প্রাপকদের নাম সুপারিশ করতে পারেন। সেই নামের তালিকা জমা পড়ে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসনে। বিডিও-রা তালিকা খতিয়ে দেখে তা চূড়ান্ত করে জেলা সংখ্যালঘু দফতরে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে সেই তালিকা চলে যায় রাজ্য সংখ্যালঘু দফতরে। সেখান থেকে প্রাপকদের নামের তালিকা ধরে টাকা চলে আসে জেলা সংখ্যালঘু দফতরে। তারা পাঠিয়ে দেয় ব্লকে। ব্লক থেকে তা চারটি বা দু’টি কিস্তিতে প্রাপকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পেও টাকা পাওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করতে হয়। জেলার ১৪টি ব্লক থেকে চলতি অর্থবর্ষে গড়ে ২৫০ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেই হিসাবে তালিকায় নাম আছে প্রায় ৩৫০০ অসহায় মহিলার।
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, চলতি অর্থবর্ষ শেষ হতে আর দু’মাস বাকি। ফলে, এখনও যদি টাকা আসে তা ১০০ দিনের মধ্যে খরচ করা কার্যত অসম্ভব। ফলে, ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ (ইউসি) দেওয়া যাবে না। ‘ইউসি’ দেওয়া না-গেলে পরবর্তী অর্থবর্ষের বরাদ্দ মিলতেও দেরি হবে। পরিস্থিতি দেখে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একটা বড় অংশের আশঙ্কা, শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পে চলতি আর্থিক বছরে আর টাকাই আসবে না।
টাকা না আসায় অসহায় মহিলারা অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় তাঁরা নিয়মিত ব্লক অফিসগুলিতে গিয়ে খোঁজখবর করছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছেন।