প্রতীকী ছবি।
ক’দিন আগেই হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ওই দিনই করোনা-আক্রান্ত দাদপুর এলাকার একটি পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের মৃত্যু হয়েছে। শ্রীরামপুরের এক বিদায়ী কাউন্সিলরও আক্রান্ত হয়েছেন ওই ভাইরাসে।
লকডাউন-পর্বে রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে লাগাম পরেছিল। কিন্তু আনলক-পর্বে এক মাস ধরে আবার বিভিন্ন দল রাস্তায় নামছে। নেতাকর্মীদের নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া, বিক্ষোভ-অবরোধ, দলবদল চলছে প্রকাশ্যে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে, কোথাও হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। হুগলি জুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আবার কিছু এলাকায়
ফিরে এসেছে লকডাউন। যে ভাবে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, তাতে তাঁদের ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দূরত্ব-বিধি সব ক্ষেত্রে রক্ষিত হচ্ছে কিনা, এ প্রশ্নও সামনে আসছে।
পরিস্থিতি যে যথেষ্ট উদ্বেগজনক তা জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের কথাতেই স্পষ্ট। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সভা-সমাবেশ একটা কারণ হতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ মানুষের দূরত্ব-বিধি না-মানা এবং নিয়ম ভাঙার প্রবণতা। এটা অত্যন্ত দুঃখের। একটা পর্যায়ে রাশ টানা গিয়েছিল। কিন্তু এখন মানুষ স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি উপেক্ষা করছেন। তার ফল হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে।’’
হুগলিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বেশিরভাগটাই চলছে গ্রামীণ এলাকায়। আমপান-ক্ষতিপূরণে শাসকদলের দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগকে ঘিরে পথে নেমেছেন বিরোধীরা। আর দলবদল তো চলছেই। কোথাও তৃণমূল নেতারা বিজেপি-সিপিএম সমর্থকদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে দলে যোগদান করাচ্ছেন। কোথাও আবার উল্টো চিত্র। ক’দিন আগেই সিঙ্গুরে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল এসেছিলেন দলীয় কর্মসূচিতে। যথারীতি সেখানে দূরত্ব-বিধির বালাই ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সিপিএম দূরত্ব-বিধি না-মানার অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে। সিপিএম নেতা সুদর্শন রায়চৌধুরীর দাবি, ‘‘আমাদের দলের প্রতিটি কর্মসূচি দূরত্ব-বিধি মেনে করা হচ্ছে। আমরা যথেষ্ট সতর্ক আছি।’’ তবে, বিজেপি এবং তৃণমূল নেতাদের কথায় স্পষ্ট, তাঁরা সব ক্ষেত্রে নিয়ম মানতে পারছেন না। বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসু বলেন, ‘‘রাজ্যের শাসকদল যে ভাবে আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করেছে, তাতে না-চাইলেও গ্রামের মানুষের পাশে থাকতে আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছেই।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবও বলেন, ‘‘দূরত্ব-বিধি মানার একটা চেষ্টা আমাদের তরফে নিশ্চিত আছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই তা রক্ষিত হচ্ছে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’’
স্বাস্থ্যকর্তারা কিন্তু বারবার দূরত্ব-বিধি মানা এবং মাস্ক ব্যবহারে
জোর দিচ্ছেন।