প্রতীকী ছবি।
হাওড়া শিবপুরে দম্পতিকে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করবে পুলিশ। কী ভাবে এবং কী দিয়ে খুন করা হল, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। এ সব কারণে খুনের অভিযোগে ধৃত ওই দম্পতির ছেলে শুভজিৎ বসুকে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার হাওড়া আদালতে আবেদন জানিয়েছিল পুলিশ। আদালত তা মঞ্জুর করেছে।
এ দিকে, প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের মানসিক অবসাদ রয়েছে। যার অন্যতম কারণ সে দীর্ঘ দিন ধরে মাইগ্রেনে ভুগছে। মাইগ্রেনের কারণে সে কখনও চাকরি করেনি বলে দাবি করেছে শুভজিৎ। সেই সঙ্গে বাবা-মা বিভিন্ন সময়ে লোকজনকে আর্থিক সাহায্য করায় পরিবারের গচ্ছিত টাকাও কমে আসছিল। তদন্তকারীদের ধারণা, এই সব কারণে চরম হতাশা থেকে তাৎক্ষণিক ক্রোধে সে বাবা-মাকে খুন করেছে।
বুধবার দুপুরে হাওড়ার শিবপুরে কৈপুকুর লেনে একটি আবাসনের চারতলা ফ্ল্যাট থেকে প্রদ্যোত বসু (৭৫) আর তাঁর স্ত্রী গোপা বসুর (৭০) পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, বাবা-মাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ওই যুবক পাঁচ দিন দেহ আগলে ছিল। প্রতিবেশী ও পুলিশের ডাকাডাকিতেও দরজা খোলেনি সে। শেষে দরজা ভেঙে পুলিশ ঢুকে দু’টি দেহ পায়। গ্রেফতার করে দম্পতির একমাত্র ছেলে শুভজিৎকে।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারের পরে শিবপুর থানার একটি ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছিল শুভজিৎকে। সারাক্ষণই সে মুখ নামিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে বসেছিল। কোনও কথার উত্তর দেয়নি। তবে বৃহস্পতিবার সে পুলিশের একাধিক প্রশ্নের উত্তর দেয়। সে পুলিশের কাছে দাবি করেছে, মাইগ্রেনের যন্ত্রণা এমন পর্যায়ে যেত যে তিন-চার দিন তাকে অজ্ঞান হয়ে থাকতে হত। দীর্ঘদিন ধরে রোগের চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হচ্ছিল। সেই কারণেই বৃদ্ধ দম্পতি ছেলেকে সাহস করে বাইরে বেরোতে দিতেন না। চাকরি করতে দেননি এবং বিয়েও দেননি। ওই দম্পতি দুঃস্থ মানুষকে টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন। এমনকি, পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ভবানীপুরের একটি ফ্ল্যাট এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দানও করেন তাঁরা। এ সব কারণেই সম্ভবত ধীরে ধীরে পরিবারটি আর্থিক সঙ্কটে পড়ে।
পুলিশের অনুমান, এই দু’টি কারণের জেরে সৃষ্ট তাৎক্ষণিক ক্রোধ থেকে শুভজিৎ এই কাজ করেছে। তবে হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কারণ যা-ই হোক, আইন আইনের পথ চলবে। খুনের পুনর্নির্মাণ করা হবে। কী ভাবে ও কী দিয়ে খুন করা হয়েছে তা দ্রুত সংগ্রহ করা হবে।’’