ফাইল চিত্র।
পুলকার দুর্ঘটনার তিন দিন পরে সোমবার পোলবার সেই নয়ানজুলি থেকে গাড়িটির ব্লু-বুক, ট্যাক্স সংক্রান্ত নথি এবং বিমার কাগজপত্র উদ্ধার করল পুলিশ। তবে, এ দিনও পুলকারটির অন্যতম চালক, শেওড়াফুলির বাসিন্দা শেখ আফরোজ শামিম আখতারকে পুলিশ ধরতে পারেনি। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি বেপাত্তা। পুলকারের আদর্শ আচরণবিধি তৈরি করে গাড়ির মালিক ও চালকদের অবহিত করতে এ দিন বৈঠক করেন চন্দননগরের অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্র্যাফিক) হরেকৃষ্ণ হালদার।
গত শুক্রবার ওই দুর্ঘটনার পরেই তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছিল, খাতায়-কলমে পুলকারটির মালিক সিঙ্গুরের বারুইপাড়ার বাসিন্দা রহিত কোলে। কিন্তু তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন, গত বছরের মার্চে তিনি গাড়িটি শেখ শামিমকে বিক্রি করে দেন। এ দিন তল্লাশি চালিয়ে নয়ানজুলি থেকে ওই গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধারের পরে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সেগুলি প্লাস্টিকে মোড়া ছিল বলে জলে বিশেষ নষ্ট হয়নি। নথি বলছে, গাড়ির কাগজপত্র এখনও রহিত কোলের নামেই আছে। দুর্ঘটনার সময়েো পুলকারটি চালাচ্ছিলেন পবিত্র দাস। তিনিও জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় পুলিশ এ দিনও তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।
তবে, পুলকারের বিপদ ঠেকাতে জেলা জুড়েই পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে পুলকারের জন্য আদর্শ আচরণবিধি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ দিন থেকেই জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের পক্ষ থেকে ১৬টি থানা এলাকায় যে সব স্কুল রয়েছে, তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। এ দিন এডিসিপি-র দফতরে চুঁচুড়া ও ব্যান্ডেলের মোট চারটি স্কুলের গাড়ির চালক ও মালিকেরা বৈঠকে যোগ দেন। তাঁদের পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, গাড়ির হাল, চাকার হাল, স্পিড গভর্নরের অবস্থা— কোনও ক্ষেত্রেই আর বিচ্যুতি বরদাস্ত করা হবে না। পুলকারে নেওয়া যাবে না বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী। পুলকারে রাখা যাবে না বেঞ্চ বা টুল।
পুলিশকর্তাদের দাবি, বহু ক্ষেত্রে গাড়ির কাগজপত্র নবীকরণ বিধি অনুযায়ী করা হয় না। চালকদের লাইসেন্সের কাগজপত্রও থাকে না। এ সব শিথিলতা মানা হবে না। প্রতিটি পুলকারে ‘ফার্স্ট-এড’ বক্স রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। চন্দননগরের এসিপি (ট্র্যাফিক) রিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের পুলকার সংক্রান্ত গাইড লাইনের কথা চালক ও মালিকদের জানিয়ে দিয়েছি।’’
চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ের এডিসিপি-র অফিসে দেখে গিয়েছে, বহু পুলকারের চালক এবং মালিক তাঁদের নাম ও ফোন নম্বর পুলিশের খাতায় নথিভুক্ত করাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে পুলকার-চালক প্রসেনজিৎ সাধুখাঁ বলেন, ‘‘এতদিন গাড়ি এক ভাবে চালাতাম। পুলিশ এখন অনেক নিয়মের কথা বলছে। নিশ্চয়ই মেনে চলব। পুলিশের কাছ থেকে কিছুটা সময় চেয়ে নিয়েছি।’’ দীর্ঘদিন ধরেই পুলকার-ব্যবসায় রয়েছেন নীরেন্দ্র পাল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই বাচ্চারা সুষ্ঠু ভাবে স্কুলে যাতায়াত করুক। আমাদের সুবিধা-অসুবিধাও অভিভাবকদের বুঝতে হবে।’’
ব্যান্ডেলের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবিকা বৈশালী মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘সময়ের অভাবেই আমরা বাচ্চাকে পুলকারে স্কুলে পাঠাই। সবটাই চালকের দায়িত্বে থাকে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, বাচ্চা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত ভয়ে থাকি।’’
ভয়ে রয়েছে শুক্রবারের দুর্ঘটনায়গ্রস্ত পুলকারের কয়েকজন কচিকাঁচাও। তাদের মধ্যে রয়েছে শেওড়াফুলির সোনালি পার্কের সম্প্রীত পাল। সাত বছরের ছেলেটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার পরিবারের লোকেরা জানান, দুর্ঘটনায় সম্প্রীতের ঘাড়ে আঘাত লাগে। জলকাদায় শরীরে অ্যালার্জি হয়ে যায়। সম্প্রীতের মা লিপা বলেন, ‘শুক্র এবং শনিবার রাতে ছেলে ঘুমের মধ্যে জেগে উঠছিল। বন্ধুরা এলে খেলনা গাড়ি সাজিয়ে বোঝাচ্ছিল, কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ লিপা আরও জানান, সম্প্রীত পুলকারের পরিবর্তে ট্রেনে স্কুলে যেতে চাইছে। এখন কয়েক দিন ছেলেকে বাড়িতে রেখে তারপরে নিজেরাই স্কুলে দিয়ে আসবেন বলে ঠিক করেছেন লিপা।