সমস্যা মিটেছে, ভয় কাটেনি রিষড়ার। ডায়েরিয়ার প্রকোপের পরে এক মাস কেটে গিয়েছে। তবু অনেকেই পুরসভার ট্যাপকলের জল মুখে ছোয়াচ্ছেন না। ছবিটা শ্রীকৃষ্ণনগর নয়াবস্তি এলাকার।
সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়েছে ডায়েরিয়ার প্রকোপ। তারপরেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিভিন্ন শহরাঞলে। ভুক্তভোগী রিষড়া অবশ্য এখনও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ডায়েরিয়া ছড়ানোর সময় বেগতিক বুঝে পুরসভাই জল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। ফের তা চালু হয়েছে। কিন্তু সেই জল আদৌ নিরাপদ কিনা, তা নিয়ে কোনও প্রচার করা হয়নি।
মাস খানেক আগে রিষড়া পুরসভার ১৮ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ডায়েরিয়া ছড়িয়েছিল ঘরে ঘরে। পুরসভার অন্দরের খবর, জলের পাইপ অনেক জায়গায় ফেটে গিয়েছিল। সেখান দিয়ে পানীয় জলের সঙ্গে মিশছে নর্দমার জল। এর পরেই জল সরবরাহ বন্ধ করে পাইপ লাইন সংস্কার করা হয়। ক্লোরিন মেশানো হয়।
সাধারণ মানুষের মন থেকে অবশ্য জল-আতঙ্ক এখনও যায়নি। মুকেশ সিংহ নামে শ্রীকৃষ্ণনগরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘পুরসভার জল মুখে দেওয়ার সাহস পাচ্ছি না। আমার বাড়িতে মাসে দেড় হাজার টাকার জল কিনতে হল। কেনা জলে তো আর ডায়েরিয়ার ভয় থাকবে না!’’
জল-ঘোলা
• মাস খানেক আগে ডায়েরিয়া ছড়িয়েছিল রিষড়ার ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে।
• বাইশ দিন দল সরবরাহ বন্ধ রেখে পাইপ লাইন মেরামত করেছে পুরসভা।
• একই অবস্থা বৈদ্যবাটিতে। পুর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত জল পরীক্ষা করেন কি না তা নিয়েই সংশয়।
• সম্প্রতি শ্রীরামপুরেও ডায়েরিয়া ছড়িয়েছিল। এখন শ্রীরামপুরের তারাপুরে ঘোলা জল আসছে।
অবিনাশ উপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পাইপ লাইন সারানো হলেও জল যে নিরাপদ, বুঝব কী করে?’’ অনেকে জানালেন, তাঁরা নলকূপের জল খাচ্ছেন। নয়তো ট্যাপকলের জল ফুটিয়ে খাচ্ছেন। স্থানীয় বিজেপি নেতা বিজয় উপাধ্যায়ও জানালেন তিনি জল কিনে খান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মানুষকে বিশুদ্ধ পানীয় জলটুকু দিতে পারছে না পুরসভা।’’
পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্র অবশ্য বলেন, ‘‘২২ দিন জল সরবরাহ বন্ধ ছিল। কেএমডব্লিউএসএ পাইপ লাইন সাফাই এবং মেরামত করেছে। জলের নমুনা পরীক্ষা করেছে। জল এখন নিরাপদ।’’ তবে এই শংসাপত্র শুধুই মৌখিক। পুরসভার এক কর্তা সাফ বলেন, ‘‘জলের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আমাদের হাতে নেই। কেএমডব্লিউএসএ থেকে রিপোর্ট আনানো হচ্ছে।’’
শুধু রিষড়াই নয়, বিভিন্ন পুরসভাতেই জল নিয়মিত পরীক্ষা হয় কিনা, তা নিয়ে বাসিন্দারা অন্ধকারে। বৈদ্যবাটির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কিছু হচ্ছে না তাই রক্ষা। হলেই সবাই ছোটাছুটি করবে।’’ বৈদ্যবাটির সর্বত্র অবস্য পুরসভার জলের পাইপলাইন পৌঁছয়নি। চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল (জল) সুবীর ঘোষের দাবি, ‘‘জলাধার নিয়মিত সাফাই হয়। যেখানে জলের পাইপ নেই, সরকারি প্রকল্পে সেখানে পাইপ বসানোর কাজ চলছে।’’ নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রেও কতটা মাটি খুঁড়তে হবে, আর্সেনিক আছে কি না— এই সমস্ত বিষয়ে ঠিকাদাররা শংসাপত্র জমা দিলেই কাজ হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।
কিন্তু ঠিকাদাররা কোথা থেকে শংসাপত্র জোগা়ড় করেন?
উত্তর জানা নেই দফতরের শীর্ষ কর্তারও।
শ্রীরামপুরের তারাপুকুর, মল্লিকপাড়াতেও অনেকে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন দিন কয়েক আগে। এখানেও অনেক বাসিন্দা জল কিনে খান। তারাপুকুরের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ট্যাপকল থেকে তো মাঝে মধ্যেই ঘোলা জল বেরোচ্ছে। হয়তো পাইপ বসানোর কাজ চলছে বলেই এমন হচ্ছে!’’ পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুব্রত ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘খুব কম মানুষই জল কিনে খান। পুরসভার ট্যাপকলের জল পরিস্রুত।’’ পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, জলের গুণমান পরীক্ষা করানো হয়।
চন্দননগরের পুরসভা সূত্রেরও দাবি, এখানে জলের মান নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেএমডব্লিউএসএ থেকে নিয়মিত জলের নমুনা পরীক্ষা করিয়ে আনা হয়। পানীয় জল নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।’’ মেয়র জানান, গোন্দলপাড়া জল প্রকল্প ছাড়াও গভীর নলকূপের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়।