দূষণ: মশাটের একটি পুকুরে পড়ে কাঠামো-ফুল। ছবি: দীপঙ্কর দে।
বুধবারের মধ্যে বিসর্জন হয়ে গিয়েছে প্রায় সব মণ্ডপের সরস্বতী প্রতিমা। ফলে নদী বা পুকুরে বৃহস্পতিবার ভাসতে দেখা গিয়েছে ছোট বড় নানা মাপের কাঠামো। ঘাটের পাশ থেকে শুরু করে জলাশয়ের মাঝ বরাবর ভাসছে ফুল, বেলপাতা, শোলা। হুগলি জেলার বেশির ভাগ এলাকাতেই ছবিটা এমন।
অথচ, সেই ২০০৩ সালেই হাইকোর্ট নির্দিষ্ট ‘গাইড লাইন’ তৈরি করে দিয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য। সে নির্দেশিকা না মেনে রাজ্যের যে কোনও জায়গায় যে কোনও প্রতিমা বিসর্জন আদালত অবমাননার সামিল বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদেরা। অভিযোগ, একমাত্র দুর্গাপুজো এবং চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো ছাড়া আর কোনও পুজোয় ওই নির্দেশিকা মানা হয় না।
অথচ, নতুন পদ্ধতিতে বিসর্জনের ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক এই হুগলি জেলারই চন্দননগর। স্থানীয় পুজো উদ্যোক্তারাই জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় ঠিক করেন, গঙ্গায় প্রতিমার খড়ের কাঠামো ভাসানো হবে না। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তৎকালীন আইনি পরামর্শদাতা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শে তাঁরা গঙ্গা থেকে জল তুলে প্রতীকী বিসর্জনের ব্যবস্থা করেন। গঙ্গা পাড়ে রেখে দেওয়া হয় প্রতিমাগুলি।
কিন্তু এরপর আর বিষয়টি চন্দননগরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সারা রাজ্যে বিষয়টি কার্যকর করার জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রচনার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সারা রাজ্যে বলবৎ হয় সেই নির্দেশিকা। এমনকি দিল্লির কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও ওই চন্দননগর মডেল অনুসরণ করে যমুনায় প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করে।
কিন্তু অভিযোগ, এ রাজ্যেই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে বিষয়টি। দুর্গাপুজোর সময় প্রশাসন সতর্ক থাকলেও। তারপর থেকে আর সেই সচেতনতা দেখা যায় না। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্য অনেক কিছুর মতো বাঙালিই এই দূষণ থেকে পরিত্রাণের উপায় আবিষ্কার করেছিল। কিন্তু একই ভাবে তা ভুলে যেতেও বেশি সময় লাগেনি। আমরা তো কিছুই মানছি না। হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতেও উদ্যোগী নয় প্রশাসন!’’
দুর্গাপুজোর পর সব থেকে বেশি প্রতিমা বিসর্জন হয় সরস্বতী পুজোয়। বাড়ি, নানা ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সর্বজনীন-সহ হাজার হাজার প্রতিমা বিসর্জন হয় প্রতি বছর। ছোট প্রতিমার পাশাপাশি থাকে বেশ বড় আকারের প্রতিমাও। কিন্তু পুরসভা বা পঞ্চায়েত কোনও এলাকাতেই সচেতনতা চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ। এ বারও চন্দননগরের সব এলাকায় যে প্রশাসন নজর রাখতে পারেনি তা স্বীকার করেছেন পুর কমিশনার স্বপন কুন্ডু। তিনি বলেন, ‘‘জগদ্ধাত্রী পুজোর মতো কড়া ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাই নজর এড়িয়ে কোথাও কোথাও জলাশয়ে, নদীতে বিসর্জন হয়ে গিয়েছে প্রতিমা। তবে বড় বড় ঘাটগুলিতে পুরকর্মীরা ছিলেন। ফুলপাতা গঙ্গায় ফেলতে দেওয়া হয়নি।’’
গাফিলতির কথা স্বীকার করেছেন উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবও। তিনি অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘আগামী বছর থেকে আমরা নিশ্চিত ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে সর্তক থাকব।’’