বিপজ্জনক: বাসের ছাদে তোলা হচ্ছে যাত্রীদের। কামারপুকুর বাসস্ট্যান্ডে। নিজস্ব চিত্র
ফের বাসের ছাদে যাত্রী পরিবহণ। ফের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু।
হাওড়া ও হুগলির গ্রামীণ এলাকায় বাস-ট্রেকারের ছাদে যাত্রী পরিবহণ বন্ধ হল না। ছাদ থেকে পড়ে যাত্রীরা জখম হচ্ছেন, মৃত্যুও হচ্ছে। তবু এক শ্রেণির বাস-ট্রেকার চালক পুলিশের বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা করছেন না। যাত্রীদেরও একাংশ ঝুঁকি নিয়েই চড়ছেন। সে ভাবেই বাসে যেতে গিয়ে সোমবার সকালে জাঙ্গিপাড়ার বাহানায় ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হল সুমিত রায় (২৮) নামে এক যুবকের। তাঁর বাড়ি জাঙ্গিপাড়ার বাদলহাটি এলাকায়। দুর্ঘটনার পরে গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে হাওড়ার জগৎবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ার দাসনগরে একটি লোহার যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানায় কাজ করতেন সুমিত। প্রতি শনিবার সেখান থেকে বাড়ি ফিরতেন। সোমবার কাজে যোগ দিতে যেতেন। এ দিনও দাসনগরে যেতে বাদলহাটির কালীতলা থেকে উদয়নারায়ণপুর-হাওড়া যাওয়ার বাসের ছাদে ওঠেন ওই যুবক। ৪ কিলোমিটার পরে বাহানায় এসে বাসের ছাদ থেকে তিনি পড়ে যান। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেকা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কিন্তু বহু যাত্রীরই অভিযোগ, পুলিশের নজরদারির অভাবেই অবাধে বাস-ট্রেকারের ছাদে যাত্রী নিয়ে যাওয়া হয়। এ কথা অবশ্য মানেননি হুগলি জেলা ডিএসপি (ট্র্যাফিক) অয়ন সাধু। তিনি বলেন, ‘‘বাস-ট্রেকারের ছাদে যাত্রী তোলার বিরুদ্ধে নিয়মিত নজরদারির খামতি নেই। অবৈধ ভাবে যাত্রী তোলা আমরা বন্ধ করবই।’’ হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তাও বলেন, ‘‘বাসের ছাদে যাত্রী তুললে আমার জরিমানা করি। তারপরও পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে যাতায়াত চলে। আমরা নজরদারি আরও বাড়াব। প্রয়োজনে চালকের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হবে।’’
বছর কয়েক আগে আরামবাগ আসার পথে কাঁঠালি এলাকায় বাসের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল গোঘাটের বাবুরামপুরের বাসিন্দা সোহারাফ খান নামে এক যুবকের। তার কিছুদিন পর আরামবাগের গৌরহাটি মোড় এলাকাযর লিঙ্ক রোডে বাসের ছাদ থেকে পড়ে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র গুরুতর জখম হয়। দুর্ঘটনার উদাহরণ আরও রয়েছে। যাত্রীরা মনে করেন, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশের নজরদারি বাড়ে। তার জেরে অবৈধ ভাবে যাত্রী পরিবহণ কিছুদিন বন্ধ থাকে। তারপরে যে-কে-সেই।
হুগলিতে খানাকুল বন্দর-কলকাতা, আরামবাগ-কলকাতা, তারকেশ্বর-বাঁকুড়া-সহ বিভিন্ন দূরপাল্লার রুটে বাসের ছাদে যাত্রী তুলে যাতায়াত চলে। শনিবার ও সোমবার বাসের ছাদে যাত্রী বেশি হয়। হাওড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কেও হামেশাই একই চিত্র দেখা যায়। দিনের বেলা পুলিশ নজরদারি চালালেও সন্ধ্যার পর সেখানে কোনও নজরদারি থাকে না বলে অভিযোগ। এ দিনই বিকেলে বাগনান থানার সামনে দেখা গেল, বাগনান-মেচেদা রুটের বাস ছাদে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের মাথার ফুটখানেক উপরে বৈদ্যুতিক তার। যে কোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তবু কারও হুঁশ নেই।
কেন বাসের ছাদে যাত্রী তোলা হয়? পুলিশের একাংশ এবং পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাটে বাস-ট্রেকার কম চলে। ফলে, যাত্রীদের ভিড় থাকে। কিছুটা আরামে যাওয়ার জন্য অনেকে বাস-ট্রেকারের ছাদে ওঠেন। আবার এক শ্রেণির চালক-কন্ডাক্টর বাড়তি রোজগারের লোভে ওই ভাবে যাত্রী তোলেন। তারকেশ্বর-বাঁকুড়া রুটের বাসচালক জয়ন্ত বিশ্বাসের দাবি, ‘‘আমরা বাসের ছাদে যাত্রী তুলতে চাই না। কিন্তু নিষেধ করা সত্ত্বেও যাত্রীদের অনেকে উঠে পড়েন।’’ তারকেশ্বর তৃণমূল বাস-ট্রেকার ইউনিয়নের নেতা শ্রীকান্ত গোস্বামী বলেন, ‘‘ অধিকাংশ বাসের ছাদের কাঠামো খুলে দেওয়া হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাদে যাত্রী তোলা হয় না।’’
তবু, ছাদে যাত্রী নিয়ে বাসযাত্রার ছবিটা বদলায় না।
তথ্য সহায়তা: সুব্রত জানা