নিষেধ: এমন অনুষ্ঠানে ছেদ পড়ল। ছবি: তাপস ঘোষ
‘হেরিটেজ’ তালিকাভুক্ত চন্দননগর স্ট্র্যান্ডে আজ, নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল। জারি হল আরও কিছু বিধিনিষেধ।
স্ট্র্যান্ডে নানা সংস্থার ইচ্ছেমতো অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং পরিবেশ নষ্ট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব পরিবেশপ্রেমীরা। এলাকাবাসীর একাংশও ক্ষুব্ধ। আনন্দবাজারেও এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে মঙ্গলবার চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বুধবার থেকে স্ট্র্যান্ডে আর কোনও রকম অনুষ্ঠান করা যাবে না। বিকেল ৪টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত স্ট্র্যান্ডের সামনে কোনও মোটরবাইক বা গাড়ি পার্ক করা যাবে না। সে জন্য বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে। স্ট্র্যান্ড চত্বরে মাইকও বাজানো যাবে না।
পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘আমরা ওই হেরিটেজ সাইটে আরও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করছি। পর্যায়ক্রমে তা কার্যকর করা হবে।’’ পুরসভার পক্ষ থেকেও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন চন্দননগরের পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু।
নয়া সিদ্ধান্ত মতো আজ স্ট্র্যান্ডে একটি সংস্থার বর্ষবরণের অনুষ্ঠান থাকলেও তা হচ্ছে না। সেই অনুষ্ঠান সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মেরির মাঠে। ৪ জানুয়ারি শাসকদলের পক্ষ থেকে একটি ‘বসে আঁকো প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করা হয়েছিল। সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে পরিবেশপ্রেমীরা খুশি। অবশ্য তাঁরা মনে করছেন, দেরিতে পুলিশ প্রশাসনের ঘুম ভাঙল। মঙ্গলবার ‘চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমি’ এবং ‘প্রবীণ নাগরিক অধিকার মঞ্চ’-এর সদস্যেরা চন্দননগরের এসিপি পলাশচন্দ্র ঢালির সঙ্গে যোগাযোগ করে স্ট্র্যান্ডে যথেচ্ছ অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁদের আপত্তির কথা জানান। এরপরেই কমিশনারেটের পক্ষ থেকে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’র কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে। স্ট্র্যান্ডে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা লক্ষ্য রাখব, এটা সঠিক ভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা। না হলে ফের আমাদের অন্য কথা ভাবতে হবে।’’
দীর্ঘদিন ধরেই স্ট্র্যান্ড রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের তালিকাভুক্ত। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না-করে স্ট্র্যান্ডে নানা অনুষ্ঠান হয় এবং মধ্যরাত পর্যন্ত মাইক বাজানোর অভিযোগ রয়েছে পরিবেশপ্রেমীদের। তাঁদের দাবি, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশমতো গঙ্গা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে প্লাস্টিক ব্যবহার করা যায় না। কোনও ‘হেরিটেজ সাইটে’ মাইক বাজানোও পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু স্ট্র্যান্ডে সে সব মানা হয় না। আসলে স্ট্র্যান্ডে ঠিক কী করা যাবে এবং কী যাবে না, এ নিয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশ এতদিন না-থাকার সুযোগেই অনুষ্ঠান হচ্ছিল বলেও মনে করেন পরিবেশপ্রেমীরা। সকাল-বিকেল যাঁরা স্ট্র্যান্ডে হাঁটতে আসেন, তাঁরাও হঠাৎ হঠাৎ অনুষ্ঠানের জন্য ক্ষুব্ধ হন।
মঙ্গলবার রাতেই একটি সংস্থা স্ট্র্যান্ডে বর্ষশেষ এবং বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করে। সে জন্য সোমবার লোহার কাঠামো দিয়ে ঘিরে মঞ্চ তৈরি হয়। পরিবেশপ্রেমীদের আপত্তি থাকলেও সেই অনুষ্ঠান অবশ্য বন্ধ হয়নি। সংস্থার দাবি, তাদের কাছে পুলিশ, পুরসভা দমকল-সহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের অনুমতি ছিল। পুরসভা এবং কমিশনারেট অনুমতি দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছে। কিন্তু আর নয়।