উঠতি: বাজারে নোবেল সন্দেশ। নিজস্ব চিত্র
কড়া মিষ্টির সেই সুদিন বুঝি আর নেই! জেন ওয়াই এখন ‘স্বাস্থ্য সচেতন’। রসনা তৃপ্তির জন্য নির্দিষ্ট স্বাদ বেছে নিতেও তারা ওস্তাদ। তাদের জন্য চাই নরম পাক। তার সঙ্গে নিত্যনতুন ঘরানার ‘আইটেম’। অতএব ভাইফোঁটার পাতে এমনই পছন্দসই মিষ্টি সাজিয়ে দিতে চান দিদিরা। আর মেয়েদের খুশি করতে নানা ভাবনা আমদানি করছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। এ বারেও তার প্রতিফলন ঘটছে মিষ্টি-বাজারে।
চন্দননগরের একটি নামী প্রতিষ্ঠানে হরেক কিসিমের রসগোল্লা মিলবে। কোনওটার স্বাদ কাঁচা আমের তো কোনওটার পাকা হিমসাগরের। স্ট্রবেরি, লিচু, কমলালেবুর স্বাদও মিলবে। এর পাশাপাশি চিরাচরিত মিষ্টির একঘেয়েমি কাটাতে ভাইয়ের পাতে হাজির করতে পারেন
ফুচকা-রসগোল্লা। দোকানদার দিলীপ সারেঙ্গির দাবি, নামে এবং চেহারায় রসগোল্লা হলেও এই মিষ্টি জিভে আনবে ফুচকার স্বাদ। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘এর প্রধান উপকরণ অবশ্যই ছানা। তার সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ফুচকার ফ্লেভার। এটা আমরা নিজেরাই বানিয়েছি। দামও আয়ত্বের মধ্যে।’’ অনেকেই বলছেন, দুপুরে মাছ-মাংস পেটপুরে খাওয়ায় অনেকে তরিবত করে মিষ্টি খেতে পারেন না। তাঁদের জন্য বিকেলের দিকে
ফুচকা-রসগোল্লার মুখরোচক স্বাদ প্রাণখোলা আনন্দ আনতে পারে। রসগোল্লার উপরে নজর দেওয়ার পাশাপাশি ছানার সঙ্গে দুধের ক্রিম মিশিয়ে তৈরি হয়েছে ছানার কেক।
রিষড়ার অন্য একটি নামী মিষ্টির দোকানে আবার আত্মপ্রকাশ করেছে ‘নোবেল সন্দেশ’। বঙ্গসন্তান অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় সদ্য নোবেল পেয়েছেন। সেই গর্বের শরিক হতে চাইছে এই দোকান। শোকেসে বিভিন্ন রকমের মিষ্টির মাঝেও ‘নোবেল’ আলাদা করে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। দু’টি স্বাদে পাওয়া যাচ্ছে এই সন্দেশ। একটি টু-ইন-ওয়ান। এর একদিকে কেশর পেস্তার স্বাদ। অপর দিকে সাধারণ সন্দেশের। দ্বিতীয়টি নলেন গুড়ের তৈরি। হেমন্তেই নলেন গুড়! দোকানের কর্ণধার অমিতাভ দে বলেন, ‘‘এই সময় নলেন গুড় পাওয়া যায় না বটে, তবে আমরা লক্ষ্মীপুজো এবং কালীপুজো-ভাইফোটার জন্য নলেন গুড় সংরক্ষণ করে রেখে দিই।’’ এর পাশাপাশি থাকছে কেশর-পেস্তা দেওয়া মালাই রাবড়ি। কেশর, পেস্তা আর আমন্ড বাদামের মিশ্রণ চিরাচরিত মিষ্টির একঘেয়েমি কাটাবে। জিভে অন্যরকম
স্বাদ আনবে।
নোনতার মধ্যে সিঙারা, খাস্তা চুরির চাহিদা যথারীতি রয়েছে। হালকা ঠান্ডার মধ্যে কেউ কেউ সিঙারার পুরে মেশাচ্ছেন ফুলকপি, কড়াইশুঁটি, বাদাম। রসগোল্লা, ল্যাংচা, পান্তুয়া, চিত্রকূট, ক্ষিরকান্তি, লবঙ্গলতিকা, খাজা, ক্ষীরমোহন, কালোজামেরাও শো-কেস জুড়ে রয়েছে। তবে ফিউশন মিষ্টির ঠেলায় তাদের কদর যে কমেছে, বলাই বাহুল্য। উত্তরপাড়া থেকে হিন্দমোটর, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, চন্দননগর, চুঁচুড়ার বিভিন্ন দোকানে তাই সাবেক আর ফিউশনমিষ্টির যুগলবন্দি।
শ্রীরামপুরের জগন্নাথ সুইটসের ঔরিক বৈরাগী বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরেই চকোলেট বা বিভিন্ন ধরনের ক্রিম, দুধের তৈরি মিষ্টির চাহিদা বেড়েছে। আমাদেরও সে দিকেই হাঁটতে হচ্ছে।’’ এই দোকানে দুধের মিষ্টিতে ক্ষীরজাতীয় ক্রিম দিয়ে তৈরি হয়েছে ‘রাজনন্দিনী’ সন্দেশ। চকোলেটের সন্দেশের উপরে থাকছে চকোলেটের ক্রিম। বাটারস্কচ, অরেঞ্জ, আমের স্বাদের মিষ্টিও অপেক্ষা করছে ভাইয়ের পাতে ওঠার জন্য।