নমাজ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন ওঁরা, পথ পেল অ্যাম্বুল্যান্স

ঘড়িতে সময় সকাল ৯টা বেজে ১০ মিনিট। জিটি রোডের উপরে নমাজ তখন মাঝপথে।

Advertisement

সুশান্ত সরকার

পান্ডুয়া: শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০০:৪৪
Share:

সাহায্য: নমাজ পড়ার মাঝেই অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য ছাড়া হল পথ। নিজস্ব চিত্র

ঘড়িতে সময় সকাল ৯টা বেজে ১০ মিনিট। জিটি রোডের উপরে নমাজ তখন মাঝপথে।

Advertisement

মুমূর্ষু এক রোগীকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল একটি অ্যাম্বুল্যান্স। তার পিছনে একটি শববাহী গাড়ি। তা দেখেই মিনিট খানেকের জন্য শ’খানেক মানুষ নমাজ পড়া বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালেন। সরে গিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে দিলেন। গাড়িদু’টি বেরিয়ে গেল। তার পরে ফের তাঁরা নমাজে বসলেন। বুধবার খুশির ইদে এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল হুগলির পান্ডুয়ার মেলাতলা।

ঐতিহাসিক গম্বুজের পাশে জিটি রোডে এ দিন সকালে নমাজের আয়োজন করেছিল অঞ্জুমান ইদ কমিটি। বহু মানুষ এখানে নমাজ পড়তে আসেন। সেই কারণে তখন ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। নমাজের মাঝেই আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা তথা অঞ্জুমান খেদমাতুল্লা ইসলাম নামে একটি সামাজিক সংগঠনের সম্পাদক হাজী কামরুল হুদার নজরে পড়ে, এক মহিলাকে নিয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে আছে। মহিলার স্যালাইন চলছে। সঙ্গে সঙ্গেই কামরুল পুলিশকে বিষয়টি জানান। পাশে যাঁরা নমাজ পড়ছিলেন, তাঁদেরও বলেন। এর পরেই রাস্তার একাংশের লোক নমাজ পড়া বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়েন। ওই অ্যাম্বুল্যান্স এবং শববাহী গাড়ি বেরিয়ে যায়। নমাজ শেষ হতে তখনও মিনিট পনেরো বাকি।

Advertisement

জানা যায়, পান্ডুয়া হাসপাতাল থেকে ওই রোগিণীকে অ্যাম্বুল্যান্সে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। অন্য দিকে, একটি মরদেহ নিয়ে শববাহী গাড়িটি ত্রিবেণী শ্মশানে যাচ্ছিল। কামরুল বলেন, ‘‘আমরা ধর্মপ্রাণ। কিন্তু মানুষের প্রাণ বাঁচানোও তো জরুরি। নমাজ বন্ধ হয়নি। আমরা কিছু জন মিনিট খানেকের জন্য নমাজ পড়া বন্ধ রেখেছিলাম। ওই মহিলা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন, এই প্রার্থনা করি।’’

অ্যাম্বুল্যান্স চালক অজিৎ সাহা বলেন, ‘‘ওই মহিলার বুকে যন্ত্রণা হচ্ছিল। অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এসে দাঁড়াতেই ওঁরা উঠে দাঁড়িয়ে গাড়ি পাস করিয়ে দিলেন। ভেবেছিলাম, নমাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়াতে হবে। কিন্তু একটুও দাঁড়াতে হয়নি। ওঁদের ভূমিকা সত্যিই ভাল লাগল।’’

পান্ডুয়ার বিধায়ক আমজাদ হোসেন, ফুটবলার রহিম নবী মেলাতলায় নমাজে যোগ দিয়েছিলেন। আমজাদ বলেন, ‘‘পান্ডুয়ার নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি রয়েছে। আমরা এখানে হিন্দু, মুসলিম-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এক সাথে বসবাস করি। কালীপুজো, দুর্গাপুজো-সহ হিন্দুদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুসলিম ভাইয়েরা অংশগ্রহণ করেন। আবার হিন্দু ভাইয়েরাও পবিত্র মুসলিমদের ইদ, মহরম-সহ বিভিন্ন পরবে সামিল হন। এ দিনের ঘটনা মানবিকতার উদাহরণ।’’ রহিম নবীর কথায়, ‘‘ওই ভাইয়েরা উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। সব মানুষের কাছেই এটা কাম্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement