অবৈধ: এই নির্মাণ ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
কানা দামোদরের পাড়ে মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে জগৎবল্লভপুরের মুন্সিরহাটে। অথচ, ব্লক ভূমি দফতরের রেকর্ড থেকে জমিটিই উধাও! নদীর পাড় বুজিয়ে সেচ দফতরের জমিতে ওই বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে—এই অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাসিন্দারা সম্প্রতি ব্লক ভূমি দফতরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়েই ব্লক ভূমি দফতরের কর্তাদের চক্ষু চড়কগাছ! এমতাবস্থায় কী করণীয় জানতে চেয়ে তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন।
ব্লক ভূমি দফতরের এক কর্তা জানান, সাধারণত দাগ নম্বরের পাশে জমির মালিকের নাম এবং জমির চরিত্র লেখা থাকে। তা খাস হতে পারে, ব্যক্তি মালিকানাধীন হতে পারে, সেচ দফতরের হতে পারে, রাস্তা হতে পারে আবার নয়ানজুলিও হতে পারে। কিন্তু মুন্সিরহাটে যেখানে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে, সেখানে দফতরের মানচিত্রে যে তিনটি দাগের উল্লেখ রয়েছে, তার পাশে লেখা রয়েছে ‘কোনও জমি নেই’। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা।
মানচিত্র অনুযায়ী মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১০ শতক। অথচ, ওই নির্মাণের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না ব্লক ভূমি দফতরের কর্তারা। দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘কোনও জমিতে বেআইনি নির্মাণ হলে যিনি সেটা করছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নিদান আছে। কিন্তু জমিটিই যদি খাতায়-কলমে না থাকে, তা হলে নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে তদন্ত কী ভাবে হবে? আমাদের হাত-পা বাঁধা।’’
জেলা ভূমি দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক মনে করছেন, সেচ ও পূর্ত দফতরের এই রকম বহু বেওয়ারিশ জমি পড়ে আছে, যেগুলি তারা একসময়ে অধিগ্রহণ করলেও রেকর্ড করেনি। বার বার এই দু’টি দফতরকে বিষয়টি জানানো হলেও তারা জমির কাগজপত্র ভূমি সংস্কার দফতরে জমা দেয়নি। এটা সেই রকম একটি ঘটনা হতে পারে। তবে, এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, এমন হলে তো জমির আগের মালিকের নামে রেকর্ড থাকবে।
দাগ আছে, অথচ জমি নেই, এটা হয় কী করে? এই প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য জেলা ভূমি দফতর থেকে মেলেনি। ব্লক থেকে আসা অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা ভূমি দফতরের ওই পদস্থ আধিকারিক।
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য ব্লক ভূমি দফতরকেই দায়ী করেছেন। ওই নির্মাণকাজের জন্য তাঁরা নদীর জল ব্যবহার করতে পারছেন না। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এটা হয় নাকি? আস্ত জমি রেকর্ড থেকে বেরিয়ে গেল, অথচ ভূমি দফতর কিছুই জানতে পারল না?’’
গ্রামবাসীর অভিযোগ, বেআইনি নির্মাণের স্বার্থে ব্লক ভূমি দফতরের কর্মীদের একাংশই কারচুপি করে রেকর্ড পরিবর্তন করেছেন। পরে সুবিধামতো যিনি নির্মাণকাজ করছেন, তাঁর নামে জমিটি রেকর্ড করে দেওয়া হবে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, নির্মাণকাজ অনেকটা হয়ে গিয়েছে। তা হচ্ছে নদীবাঁধের ভিতরেই। এই নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্য দাবি, তাঁরা বেআইনি কিছু করছেন না।