ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের লাইন। বৃহস্পতিবার পান্ডুয়ায়। — নিজস্ব চিত্র ।
দেশজোড়া লকডাউনের সময় কাজ হারিয়ে তাঁরা ফিরেছিলেন। কিন্তু এখানে পেট চালানোর মতো আয় হচ্ছে না। তাই পাশের জেলা হাওড়ার মতোই ফের ভিন্ রাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন হুগলির বহু পরিযায়ী শ্রমিক।
মঙ্গলবার রাতে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে পান্ডুয়া থেকে দু’টি বাস ছাড়ে গুজরাতের সুরতের উদ্দেশ্যে। ৪০ আসনের দু’টি বাসেরই সব আসন ছিল ভর্তি। একটি বাসের চালক শেখ সাজিদ বলেন, ‘‘গত ১০ দিনে দু’বার এলাম। অনেকে কাজে ফিরতে বাস-মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বাকি আসন এখানে এলে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।’’
পান্ডুয়া, বৈঁচী, বলাগড়, পোলবা-সহ নানা জায়গার শ্রমিক রয়েছেন এই তালিকায়। তাঁদের নিয়ে যেতে দিন পনেরো ধরে হুগলিতে ভিন্ রাজ্যের বাসের আনাগোনা শুরু হয়েছে। দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল শুরু হলে এই সংখ্যা বাড়বে বলে প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশও মনে করছেন।
গ্রামে ফিরে আসা শ্রমিকের অন্নসংস্থানের জন্য মূলত ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের আশ্রয় নিয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি, হুগলিতে প্রায় ৫০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে আসেন। তার মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি লোক ওই প্রকল্পে কাজ পেয়েছেন। কাজ চেয়ে পাননি, এমন উদাহরণ বিশেষ নেই। তা হলে ফিরছেন কেন?
শ্রমিকদের বক্তব্য, কাজ মিললেও ওই আয়ে সংসার চলে না। তাই পুরনো কর্মস্থল থেকে ডাক পেলে রুজির টানে ফিরে যাচ্ছেন।
পান্ডুয়া ব্লকের ক্ষীরকুণ্ডী-নিয়ালা-নমাজগ্রাম পঞ্চায়েতের জোড়াপুকুর গ্রামের কৃষ্ণ বাউলদাস সুরতে গয়না পালিশের কাজ করতেন। লকডাউন-পর্বে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে ফেরেন। বাবা মারা গিয়েছেন। বৃদ্ধা মা এবং দুই ভাইকে নিয়ে সংসার। তিনি বলেন, ‘‘মায়ের নামে জবকার্ড আছে। ফেরার পরেই ব্লক প্রশাসন জবকার্ডে আমার নামও তুলে দিয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন কাজ পাই না। এই মজুরিতে সংসারও চলবে না।’’
কয়েক দিন ভাড়ায় টোটো চালান কৃষ্ণ। কিন্তু লোকাল ট্রেন না চলায় যাত্রী মিলছিল না বলে তাঁর দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘আর্থিক সঙ্কটে পড়ে সুরতে মালিককে ফোন করি। তিনি কাজে যোগ দিতে বলেন। ওখানে ১২ হাজার টাকা বেতন এবং থাকা-খাওয়া পাই।’’ একই বক্তব্য সেখানকার উত্তম ক্ষেত্রপাল, শেখ ইমরানদের।
মহানাদের সন্দীপ বাউলদাস সুরতে সোনা সেটিংয়ের কাজ করেন। মাসে ১৫-১৮ হাজার টাকা আয়। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ি ফিরে একশো দিনের কাজ করেছি। বাবার নামে জবকার্ড। তাতে চার জন কাজ করি। কয়েক মাসের মধ্যে বিয়ে করব। এই কাজ করে সংসার চলবে? বাধ্য হয়েই ফিরে যাচ্ছি।’’
এর পাশাপাশি কর্মসন্তুষ্টির কথাও উঠে আসছে। অনেকেই জানিয়েছেন, নিজের জানা কাজ ছেড়ে একশো দিনের কাজে মানিয়ে নিতে পারছেন না।
বিভিন্ন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, বিশেষত দক্ষ শ্রমিকেরা অন্য রাজ্যে যে টাকা রোজগার করেন, এই কাজে তা সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ধরুন, এক জন সোনা পালিশের কাজে পারদর্শী। কোদাল হাতে মাটি কাটতে তার ভাল লাগবে কেন! তবে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশাসন তাঁদের পাশে রয়েছে।’’ অপর এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘বেকার যুবকেরা নানা পেশায় ব্যাঙ্কঋণ পেতে পারেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরের মধ্যস্থতায়। তবে এটা সময়সাপেক্ষ।’’