সততা: মানকুণ্ডু স্টেশনে বিশ্বনাথ দুলে। —নিজস্ব িচত্র
তিনি স্কুলের গণ্ডি পেরোননি। কলকাতার এক জায়গায় সাফাইকর্মীর কাজ করেন। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার হাড়ভাঙা পরিশ্রমে মাসে মেলে ৮ হাজার টাকা। বাড়িতে অভাব প্রকট। তা বলে পড়ে পাওয়া পাওয়া টাকা আত্মসাৎ করার কথা কখনও ভাবেননি মানকুণ্ডু স্টেশন লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা, বছর উনিশের বিশ্বনাথ দুলে।
বৃহস্পতিবার রাতে কাজ থেকে ফেরার সময়ে ট্রেনে এক ব্যবসায়ীর ৮৪ হাজার টাকাভর্তি ব্যাগ পেয়েছিলেন বিশ্বনাথ। যা তাঁর প্রায় ১১ মাসের রোজগার। কিন্তু নেননি। ওই রাতেই বাবার সঙ্গে মানকুণ্ডু স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকে ফোনে যোগাযোগ করে সুমিত শীল নামে শ্রীরামপুরের ওই ব্যবসায়ীকে তাঁর টাকা সমেত ব্যাগ ফিরিয়ে দিলেন।
মানকুণ্ডু স্টেশনের পাশেই বিশ্বনাথের বাবা লক্ষ্মীকান্ত দুলের চা এবং লটারির টিকিট বিক্রির গুমটি রয়েছে। লক্ষ্মীকান্ত বলেন, ‘‘রাতে ছেলে বাড়ি ফিরেই বলে, ব্যাগে অপরের অনেক টাকা রয়েছে। ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। উনি (সুমিত) ফোন না-করলেও টাকাটা আমরা আগলে রাখতাম। যে কোনও উপায়ে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম।’’ আর বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘কী ভাবে ব্যাগের মালিককে টাকা সমেত ব্যাগ ফিরিয়ে দেব, বাড়ি ফিরে সেটাই ভাবছিলাম। তখনই উনি (সুমিত) ফোন করেন। আমাদের অভাবের সংসার। বাবা আর আমি দু’জনে পরিশ্রম করে সংসার চালাই। কিন্তু পরের টাকা নেওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।’’
ট্রেনে কী ঘটেছিল?
সুমিত শীল নামে শ্রীরামপুরের মাহেশের বাসিন্দা এক যুবক কলকাতার বড়বাজারে ব্যবসা করেন। বৃহস্পতিবার কাজ সেরে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ি ফেরার সময় ভুল করে বিশ্বনাথের ব্যাগ নিয়ে শ্রীরামপুরে নেমে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারেন, অন্যের ব্যাগ নিয়ে নেমেছেন। তাঁর ব্যবসার টাকা ভর্তি ব্যাগ ট্রেনেই রয়ে গিয়েছে। বিষয়টি তিনি শেওড়াফুলি জিআরপি-র আধিকারিককে জানান। বেশ কিছুক্ষণ বাদে খেয়াল হয়, ব্যাগে তাঁর মোবাইল ফোন রয়েছে। তখন সেই নম্বরে তিনি ফোন করেন। মনে সংশয় ছিল, কেউ কী ফোন ধরবে? ব্যাগ কি ফিরে পাওয়া যাবে?
ফোন ধরেছিলেন বিশ্বনাথ। তিনি সুমিতকে জানান, ব্যাগ তাঁর কাছে রয়েছে। সুমিত যেন মানকুণ্ডু স্টেশনে এসে তাঁর কাছ থেকে নিয়ে যান। শ্রীরামপুর থেকে পরের ট্রেন ধরে সওয়া ১১টা নাগাদ মানকুণ্ডু স্টেশনে পৌঁছন সুমিত। দেখেন, ওই তরুণ তাঁর ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সুমিতও বিশ্বনাথের ব্যাগ ফিরিয়ে দেন। সেই ব্যাগে বিশ্বনাথের খালি টিফিন কৌটো এবং পোশাক ছিল।
বিশ্বনাথ জানান, মানকুণ্ডুতে ট্রেন ঢোকার কিছুটা আগে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর ব্যাগ নিয়ে অন্য কেউ নেমে গিয়েছেন। পাশে থাকা ব্যাগের দাবিদার কেউ নেই। ব্যাগ খুলে দেখেন, অনেক টাকা রয়েছে। ইতিমধ্যেই স্টেশন এসে যায়। ব্যাগটি নিয়ে বাড়িতে ফিরে বাবাকে সব জানান।
রাতে বাড়ি ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সুমিত। ‘‘ভাগ্যিস, বিশ্বনাথের হাতে ব্যাগটা পড়েছিল!’’— বলছেন তিনি।